যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতে চাপে ইউক্রেন, বাড়তি ব্যয় ইউরোপের কাঁধে

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা স্থগিতের পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় অনিশ্চয়তা—ইউরোপকেই এখন নিতে হতে পারে বাড়তি বোঝা।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য সাময়িকভাবে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে ইউক্রেন যেমন চাপের মুখে পড়েছে, তেমনি ইউরোপীয় দেশগুলোকেও যুদ্ধের ব্যয় বহনে দ্বিগুণ প্রস্তুতি নিতে হতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউরোপে ৮০০ বিলিয়ন পাউন্ডের প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অস্ত্র ফেরত নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত ইউক্রেনে নতুন করে কোনো অস্ত্র পাঠানো হবে না। পূর্বনির্ধারিত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের চালানও স্থগিত করা হয়েছে। এমনকি যেসব অস্ত্র ইতিমধ্যে পোল্যান্ডের ট্রানজিট এলাকায় পৌঁছে গেছে বা বিমানে উঠেছে, সেগুলোও ফেরত আনা হবে। এ নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন।
ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক ও উত্তেজনা
২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের একপর্যায়ে জেলেনস্কি ও তাঁর দলকে ওভাল অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওইদিন খনিজ সম্পদ বিষয়ক একটি চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও তা ভেস্তে যায়।
জেলেনস্কির অবস্থান
সামরিক সহায়তা বন্ধ হলেও ইউক্রেন শান্তির জন্য ট্রাম্পের নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে খনিজসম্পদ চুক্তিতে যেতে ইউক্রেন রাজি।
অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
তবে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। ইউক্রেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোদনিয়ুক বলেন, জেলেনস্কিকে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ইউক্রেনের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির প্রধান বলেন, এই সহায়তা বন্ধ মানেই রাশিয়ার পক্ষে অবস্থান নেওয়া।
ইউরোপের উদ্যোগ
যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ইউরোপকে যুদ্ধের ভার নিতে হবে। এজন্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ব্রাসেলসে ‘ইউরোপকে নতুন করে অস্ত্রসজ্জিতকরণ’ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এই পরিকল্পনায় ৮০০ বিলিয়ন পাউন্ডের প্রতিরক্ষা তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের ইঙ্গিত
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর আরোপিত কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে চায়। এতে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের সূত্র।
অর্থনৈতিক ভারসাম্যের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ইউক্রেনকে ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলো মিলে দিয়েছে প্রায় ৬২ বিলিয়ন ইউরো (৬৪ বিলিয়ন ডলার)। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে ইউরোপকে দ্বিগুণ ব্যয় করতে হতে পারে।
প্রযুক্তি ও অস্ত্র ঘাটতি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছিল তিনটি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রযুক্তি। ইউরোপের পক্ষে এই ঘাটতি পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।
এই অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ শুধু অস্ত্র নয়, কূটনীতি, অর্থনীতি ও ভূরাজনীতির ওপরও নির্ভর করছে।