পল্লবীতে অটোরিকশাচালককে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা ও ছিনতাই - মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৫

পল্লবীতে অটোরিকশাচালককে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা: ছিনতাই চক্রের মূল হোতাসহ গ্রেপ্তার ৫, উদ্ধার গাড়ি
ঢাকার পল্লবীতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালককে হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটিও কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে র্যাব-৪–এর সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪–এর কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম। তিনি জানান, হত্যাকাণ্ডটি ছিল সুপরিকল্পিত এবং পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে র্যাব-৪, র্যাব-৯ এবং র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সমন্বিত অভিযানে ঢাকা, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন: মো. সৌরভ সরকার (২০), মো. ইয়াছিন মিয়া (২০), মো. মুসা (২৫), মো. দুলাল মিয়া (৩২) এবং মো. শাহজালাল (২৬)। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
র্যাব জানায়, চক্রটিতে মোট ছয় থেকে সাতজন সদস্য রয়েছে এবং বাকিদের পরিচয় ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
১৬ মে পল্লবীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার ৪ নম্বর গেটসংলগ্ন স্থান থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে র্যাব। পরবর্তীতে জানা যায়, নিহত ব্যক্তি আবদুল অজিদ ওরফে বাচ্চু, যিনি একজন পেশাদার সিএনজিচালক ছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে অভিযুক্তদের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।
তদন্তে উঠে আসে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন বন্ধু—মুসা, ইয়াছিন ও সৌরভ—এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তারা আগেও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল এবং টাকার প্রয়োজনে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ মে সৌরভ ও ইয়াছিন ঢাকায় আসে এবং রাতভর অপেক্ষা শেষে শ্যামলী ইবনে সিনা হাসপাতালের সামনে থেকে তারা আবদুল বাচ্চুর অটোরিকশায় যাত্রী সেজে ওঠে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁরা চালককে নিয়ে যান ৬০ ফিট এলাকার পানির ট্যাংকির সামনে। সেখানে অপেক্ষায় ছিল ইয়াছিন। চালককে অটোরিকশা ঘোরানোর কথা বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে পেছন থেকে মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে মুসার ফোনে নিশ্চিত হয়ে নেয়া হয় যে চালক মারা গেছেন। লাশ লুকানোর জন্য তারা একাধিক স্থানে ঘোরাঘুরি করে এবং অবশেষে ডিওএইচএস এলাকার একটি প্রাচীর ঘেঁষে ফেলে দেয়।
পরদিন সকালে তারা সিএনজিটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পথে রওনা দেয়। পথেই তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় শাহজালাল ও দুলাল, যারা চোরাই গাড়ির চক্রের সদস্য বলে র্যাব জানিয়েছে। পরে অটোরিকশাটি ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। চক্রের নেতা আল আমিন গাড়িটি নিয়ে কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি ওয়ার্কশপে নিয়ে যান, যেখানে যানটির রং ও কাভার পরিবর্তনের কাজ চলছিল।
র্যাব জানিয়েছে, এই চক্রের সদস্যরা পেশাদার অপরাধী এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।