জর্ডান হুঁশিয়ারি দিল যুক্তরাষ্ট্রকে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে

যুক্তরাষ্ট্র যেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে হত্যা না করে, এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সঙ্গে শারার বৈঠকের আগে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের এক সিনেট সদস্য জানিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে শারার প্রতি বৈরী মনোভাব কতটা প্রবল, তা ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেট সদস্য জিন শাহিনের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ১৪ মে শারার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, বিদেশি নেতারা তাকে শারাকে একটি সুযোগ দিতে অনুরোধ করেছিলেন, তবে তার উপদেষ্টারা সন্দিহান।
সিনেটে গত বৃহস্পতিবার শাহিন বলেন, ‘প্রশাসনের কিছু মহলে এমন গুজব শুনেছি যা উদ্বেগজনক… সিরিয়ার নতুন নেতা আহমেদ আল-শারাকে হত্যার একটি বিকল্প প্রস্তাবও এসেছে।’
শাহিন আরও বলেন, বাদশাহ আবদুল্লাহ এ ধরনের নেতৃত্ব পরিবর্তন সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ বাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন এবং এখন যে সুযোগ এসেছে তা নষ্ট হবে।
মে মাসে ওয়াশিংটনে শাহিন বাদশাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন; ধারণা করা হচ্ছে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা এবং ট্রাম্প-শারার বৈঠকের ঠিক আগেই তারা এ কথা বলেছিলেন।
সিনেটে শুনানির সময় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রাচ্যবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি মনোনয়নপ্রাপ্ত জোয়েল রেইবার্নকে শাহিন হত্যার পরিকল্পনা বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
গত সপ্তাহের ঘটনাপ্রবাহে এ মন্তব্যগুলো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর ১৯৭৯ থেকে চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে চমক সৃষ্টি করেছেন।
রিয়াদে শারার সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, শারা ‘তরুণ, আকর্ষণীয় ও শক্তিশালী’ একজন যোদ্ধা।
রেইবার্ন বলেন, তিনি কোনো হত্যার পরিকল্পনা জানেন না এবং তা প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না।
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। রিয়াদে, ১৪ মে ২০২৫
ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা রিয়াদে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। পররাষ্ট্র দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কিছু সদস্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া বিলম্ব করার চেষ্টা করছেন, যাতে শারার কাছ থেকে কিছু ছাড় পাওয়া যায় বলে শোনা যায়।
সিনেট সদস্য ক্রিস মারফি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সদস্য সিদ্ধান্ত অবজ্ঞা করার চেষ্টা করছেন।
রেইবার্ন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সিরিয়ায় মার্কিন দূত ছিলেন এবং কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত। এখন তিনি ট্রাম্পের নতুন উদ্যোগকে সমর্থন করছেন।
হোয়াইট হাউস জানায়, তারা চান শারা ফিলিস্তিনি ও বিদেশি যোদ্ধাদের সিরিয়া থেকে বিতাড়িত করুন এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই চালান। ট্রাম্প শারার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের বিষয়েও আলোচনা করেছেন।
শারা ছিলেন হায়াত তাহরির আল-শাম নামক কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠনের কমান্ডার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
শারার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র একসময় এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, যা বাইডেন প্রশাসন ২০২৫ সালের শুরুতে প্রত্যাহার করে। তবে শারার নাম এখনও ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ তালিকায় রয়েছে।
শারার প্রধান মিত্র তুরস্ক, এবং তিনি সিরিয়া উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত পরোক্ষ আলোচনা করছে।
সিরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ পরিচালক আলী আল-রিফাই বলেছেন, সিরিয়া সবার সঙ্গে শান্তি চায়।
ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ।