স্বাস্থ্য খাতে ভবন নির্মাণই যেন প্রধান কাজ: ফরহাদ মজহার

স্বাস্থ্য নয়, আগে ভবন—মাঠ পর্যায়ে ফাঁকা পড়ে আছে হাসপাতাল - ফরহাদ মজহার
স্বাস্থ্য খাতের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণিকে চিহ্নিত করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যসেবার নামে কাজ শুরু করলেই প্রথমে বিশাল ভবন তৈরি হয়। কিন্তু এসব ভবন গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ফাঁকা পড়ে আছে—না আছে চিকিৎসক, না আছে নার্স, না আছে ওষুধ।”
শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘স্বাস্থ্য কমিশন রিপোর্ট: বাস্তবায়নের পথনির্দেশনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল বক্তা ছিলেন ফরহাদ মজহার। সভাটি আয়োজন করে ‘সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ’ নামের একটি নাগরিক সংগঠন।
ফরহাদ মজহার প্রশ্ন তোলেন, “চীন কেন বাংলাদেশে হাসপাতাল বানিয়ে দেবে?” তিনি বলেন, বিনিয়োগের বিরোধিতা করা হচ্ছে না, তবে অবাধ বাজারনীতির নামে স্বাস্থ্য খাতকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের প্রতি তাঁর আহ্বান, “বিনিয়োগের ফলে জনগণের উপকার হচ্ছে কি না, তা প্রমাণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সামাজিক অসুস্থতার কারণগুলোর উল্লেখ নেই। “শুধু হাসপাতাল বা ওষুধকে স্বাস্থ্য বলা চলে না,” মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভাবার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ফরহাদ মজহার।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা যে কোনো সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ছাড়া যেসব প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, সেগুলো বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলা উচিত,” বলেন ফরহাদ মজহার। তাঁর মতে, নারী ও শ্রম কমিশনের প্রতিবেদন কিছুটা হলেও সেই চেতনা ধারণ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের এক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তিনি বলছেন, অভ্যুত্থান তাঁদের ম্যান্ডেট দিয়েছে। কিন্তু আমরা কখন বলেছি আমরা বিপ্লব করেছি? উনি কোথা থেকে বিপ্লব পেলেন?”
তিনি বলেন, “এই বক্তব্য ভয়ংকর। এটি আমাদের অন্তরে শেলের মতো বিঁধেছে। আমরা কি দেশের মালিকানা বিদেশে তুলে দিতে গণ-অভ্যুত্থান করেছিলাম?”
স্বাস্থ্য মানে শুধু চিকিৎসা নয়
সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ঢাকার কোনো হাসপাতালে মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন রোগী ১০ দিন ভর্তি থাকলে তার পরিবার গরিব হয়ে যায়।” তিনি বলেন, কৃষি সংস্কার ছাড়া স্বাস্থ্যনীতি সফল করা যাবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “রাষ্ট্র ও সরকার চিকিৎসাকে শুধু স্বাস্থ্য হিসেবে দেখেছে।” তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজনীতি এখন কে কতদিন ক্ষমতায় থাকবে এবং পরে কে আসবে—এই হিসাব-নিকাশেই আটকে আছে, যার ফলে জুলাই আন্দোলনের ঐক্যে ফাটল ধরেছে।
বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি যেসব পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, তা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে—সেটির স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ ফোরামের আহ্বায়ক কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ)-এর সমন্বয়ক সীমা দাস ও ভাববৈঠকি’র প্রধান সমন্বয়ক মো. রোমেল।
আলোচনা সভা শেষে ‘স্মৃতিতে ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: ০১ জুলাই–০৮ আগস্ট’ শীর্ষক একটি পোস্টারের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।