হজের ইতিহাসে আক্রমণ ও ডাকাতি

হজের ইতিহাসে আক্রমণ ও লুটপাট: মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের হামলা, সামাজিক সংকট এবং নিরাপত্তার সংকট হাজিদের যাত্রা ব্যাহত করেছে
রাজনৈতিক সংঘাত, মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি হজ ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করেছে সামরিক আক্রমণ ও লুটপাট। এই পর্বে মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ, সামাজিক-অর্থনৈতিক বাধা এবং হজপথে ডাকাতির প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।
মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণ
মঙ্গোল ও ক্রুসেডারদের আক্রমণে মুসলিম অঞ্চলগুলোতে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা, হজের পথ হয়ে ওঠে অনিরাপদ।
-
মঙ্গোল আক্রমণ শুরু হয় ৬১৫ হিজরিতে (১২১৮ খ্রি.), যার ফলে ইরান, ইরাক, মধ্য এশিয়া জুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।
-
আবু শামা মাকদিসি উল্লেখ করেন, ৬১৭ হিজরিতে (১২২০ খ্রি.) খোরাসান ও পারস্য থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি।
-
৬৩০ হিজরি (১২৩৩ খ্রি.) থেকে মঙ্গোলদের নজর পড়ে ইরাকের দিকে। ইমাম জাহাবি লিখেছেন, যুদ্ধ বাধায় সবাইকে যুদ্ধে অংশ নিতে হওয়ায় হজ বন্ধ হয়ে যায়।
-
৬৫৬ হিজরি (১২৫৮ খ্রি.) সালে মঙ্গোলরা বাগদাদ দখল করে আব্বাসি খিলাফতের পতন ঘটায়, যা দীর্ঘ সময় হজ স্থগিত রাখে।
ক্রুসেডাররাও হজকে বাধাগ্রস্ত করে।
-
৪৯২ হিজরি (১০৯৯ খ্রি.) ক্রুসেডাররা ফিলিস্তিন ও শামের উপকূল দখল করে নেয়।
-
৬২৪-৬২৭ হিজরি (১২২৮-১২৩১ খ্রি.) পর্যন্ত শামের হাজিরা হজে যেতে পারেননি।
-
ক্রুসেডারদের উপস্থিতি ও আইয়ুবি শাসনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দেয়।
সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা
হজ পালনে অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও সামাজিক স্থিতি অপরিহার্য।
-
ফাতেমি ও আব্বাসি দ্বন্দ্বের সময় মিসর ও ইরাকে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা।
-
৪১১ হিজরি (১০২১ খ্রি.) ওয়াসিতে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে হজ বন্ধ হয়ে যায় (ইবনে জাওজি)।
-
৪৪১ হিজরি (১০৫০ খ্রি.) বাগদাদে সুন্নি-শিয়া দাঙ্গার কারণে হজযাত্রা বন্ধ হয় (ইবনে কাসির)।
ডাকাতি ও লুটপাট
হজের পথে লুটেরা ও বেদুইন গোষ্ঠীর হামলা হাজিদের জীবন ও সম্পদ হুমকির মুখে ফেলে।
-
৩৮৪ হিজরি (৯৯৫ খ্রি.) আসফার আরাবি নামক বেদুইন নেতা হাজিদের সম্পদ দাবি করেন, ফলে তারা হজ না করেই ফিরে যান (ইবনে আসির)।
-
৪২৪ হিজরি (১০৩৪ খ্রি.) ইরাক ও মিসরের হাজিরা বেদুইনদের ভয়ে হজে যেতে পারেননি।
-
বসরা থেকে যাত্রারত কাফেলার ওপর হামলা হয়, যদিও আগেই নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
কখনো কখনো শাসকেরা লুটেরাদের সঙ্গে চুক্তি করতেন:
-
৩৮৫ হিজরি (৯৯৬ খ্রি.) বদর ইবনে হাসানওয়াইহ কুর্দি আসফার আরাবিকে ৫ হাজার দিনার দেন, যেন হাজিরা নিরাপদে যেতে পারেন (ইবনে তাগরিবারদি)।
-
এটি পরে একটি নিয়মিত রীতিতে রূপ নেয়।
ফিকহের দৃষ্টিতে ডাকাতির প্রভাব
ইসলামী ফিকহে হজের পথে অনিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে।
-
ইমাম কাসানি (বাদাইউস সানাই) বলেন, পথে নিরাপত্তা না থাকলে হজ ফরজ হয় না।
-
মালিকি ফকিহরা লুটপাটের সম্ভাবনায় হজের বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার ফতোয়া দিয়েছেন।
-
ইবনে রুশদ ও তুরতুশি মত দেন, বিপজ্জনক পথ হজকে নিষিদ্ধ পর্যায়ে নিতে পারে।