বৃষ্টিতে ভিজেও বকেয়া বেতনের দাবিতে টিএনজেড শ্রমিকদের বিক্ষোভ

বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে বৃষ্টির মধ্যেও অবস্থান নিয়ে স্লোগান টিএনজেড পোশাকশ্রমিকদের।
মুষলধারে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাকশ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগানে তারা তাদের দাবি জানাতে থাকেন।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রমিকরা জাতীয় শ্রম ভবনের সামনে থেকে মিছিল বের করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র উদ্দেশে যাত্রা করেন। কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দিলে তারা সেখানে বসে পড়ে অবস্থান নেন। এ সময় কাকরাইল থেকে মগবাজার ও মহাখালী সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
বৃষ্টিতে ভিজেও শ্রমিকরা ‘বেতন ছাড়া যাব না’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও’, ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না’—এমন স্লোগানে কাঁপিয়ে তোলেন এলাকাটি। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাদের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শ্রমিক মিজানুর রহমান জানান, তিনি আট বছর ধরে টিএনজেড গ্রুপে কাজ করছেন। তিন মাসের বেতন ও বোনাস পাওনা থাকলেও কোনো ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে আছি। ৯ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করেছি। আজ এসেছি বেতনের দাবিতে।”
তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়া এবং বাসাভাড়া দিতে না পারার কারণে বাড়িওয়ালার চাপের কথা বলেন অপারেটর সবিতা রানী দাস। তিনি বলেন, “বৃষ্টি-ঝড় যতই হোক, বেতন-বোনাস না পেলে ফিরে যাব না।”
শ্রমিক লিপি আক্তার বলেন, “বেতন-বোনাস ছাড়াই কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। আমরা রাস্তায় নেমেছি, কারণ পাওনা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।”
টিএনজেড শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে এবং তিনি বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, “আমরা সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। অবস্থান কর্মসূচি চলবে।”
জানা গেছে, টিএনজেড গ্রুপের কাছে শ্রমিকদের মোট পাওনা প্রায় ৫৪ কোটি টাকা। গত ঈদুল ফিতরের আগে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও দেওয়া হয় মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রত্যেক শ্রমিক পান ৯ হাজার ১০০ টাকা করে। বাকি বেতন, বোনাস, নোটিশ পে ও সার্ভিস বেনিফিটসহ সব পাওনার দাবিতে গত ১১ মে থেকে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।
উল্লেখ্য, গত ৮ এপ্রিল আরএমজিবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) ২০তম সভায় টিএনজেড গ্রুপের চারটি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।