ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ: সমাধান আসছে না কেন?

পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীর সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে ভারত, নতুন করে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক।
সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। সামরিকভাবে ভারত কিছু সফলতা অর্জন করলেও, কৌশলগতভাবে এটি দেশটির জন্য একটি বড় ধাক্কা। দীর্ঘ ৭৮ বছর ধরে চলা এই দ্বন্দ্বের মীমাংসা এখনও অধরা, কারণ উভয় দেশই পরমাণু শক্তিধর এবং কৌশলগত কারণে কোনো পক্ষই সম্পূর্ণ বিজয় অর্জনে সক্ষম নয়।
ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন একে "কৌশলগত বিভ্রম" বলে উল্লেখ করেছেন, যার মূল কারণ পাকিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাস। দুই দেশের মধ্যে শান্তিচেষ্টার অনেক উদাহরণ থাকলেও, এগুলো ব্যর্থ হয়েছে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ এবং রাজনৈতিক চাপে দুই দেশের নেতৃত্বই শান্তিপথে অগ্রসর হতে পারছে না।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর ভারত সংযম দেখালেও, এবার তা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং সীমান্তে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ড্রোন ও আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে যুদ্ধের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক অবস্থানও পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
ভারতের অর্থনীতি ও কূটনৈতিক শক্তি বাড়লেও পাকিস্তান সবসময় ছায়ার মতো থেকে যায়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতকে চিরশত্রু হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখে। পরমাণু অস্ত্র অর্জনের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং আরও জটিলতা বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসময় শান্তির পথে আগ্রহ দেখালেও বারবার সন্ত্রাসী হামলার কারণে সেই চেষ্টা থমকে যায়। এখন ভারতের প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর—প্রতিটি হামলার জবাবে পাল্টা আঘাত, কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে একঘরে করা এবং পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি।
উপসংহার:
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে প্রধান বাধা হলো পারস্পরিক অবিশ্বাস, রাজনৈতিক চাপ এবং সন্ত্রাসের প্রভাব। যতদিন পর্যন্ত দুই দেশ আন্তরিকভাবে আপসের পথে না আসে, ততদিন এই সংঘাত থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদিও শান্তির আহ্বান জানায়, বাস্তবে তা এখনও দূরের স্বপ্ন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।