বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতার যোগসাজশে ভিজিডি চাল বিতরণে ঘুষ গ্রহণ

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ২নং পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ডের চাল বিতরণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও বুধবার (২১ মে) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান রিপন, ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ড সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন এবং প্যানেল চেয়ারম্যান লাল মিয়ার সহযোগী সুমনকে যোগসাজশে কার্ডধারী নারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে দেখা যাচ্ছে।

পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পোগলদিঘা ইউনিয়নে বিধবা ও স্বামী-পরিত্যক্তা নারীসহ হতদরিদ্রদের জন্য মোট ৪৫৬টি ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে ৫ মাসে প্রতিটি কার্ডধারী ১৫০ কেজি চাল পান।

বুধবার সকাল থেকে কার্ডধারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল উত্তোলনের অপেক্ষায় ছিলেন। তবে বিতরণের শুরু থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কক্ষে চলে ‘টাকা নেওয়ার মহোৎসব’। পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই কার্ডধারীদের কাছ থেকে প্রতিটি কার্ডের জন্য ২০০-৩০০ টাকা করে আদায় করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

ভাইরাল হওয়া গোপনে ধারণকৃত ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, “খরচ কই? ২০০। ২০০। অফিসার বসে আছে।” পাশ থেকে আরেকজন বলেন, “৬ হাজার টেহার চাল পাইতেছো, ২০০ টেহা দিতে পারবা না?”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কার্ডধারী জানান, “আমাদের ২০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। কেউ কেউ ১০০ দিলেও চাল পেয়েছেন। টাকা না দিলে চাল দেওয়া হবে না—এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে।”

বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোবারক হোসেন মুঠোফোনে বলেন, “আমি চক্রান্তের মধ্যে পড়ে গেছি। আপনি আসেন, এসে খোঁজ নেন।” এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। প্যানেল চেয়ারম্যান লাল মিয়ার বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে একজন জানায়, তিনি ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (এসিল্যান্ড) লিসা রিছিল বলেন, “ভিজিডি চাল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণের কথা, অর্থ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদারকি কর্মকর্তা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় দুপুর ২টার দিকে চলে গেছেন। এরপর ৫৮টি কার্ড বিতরণের পর চাল বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ভিডিওটি আমি দেখেছি, তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”