শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মসজিদুল হারামের জুমার খুতবা থেকে হে আল্লাহর বান্দারা! মা-বাবার প্রতি সদাচারী হোন

শায়েখ সউদ ইবনে ইবরাহীম আশশুরাইম

 প্রকাশিত: ০৭:০৩, ১ নভেম্বর ২০২২

মসজিদুল হারামের জুমার খুতবা থেকে হে আল্লাহর বান্দারা! মা-বাবার প্রতি সদাচারী হোন

বিগত ১৩ জুমাদাল উলা ১৪৪৩ হিজরী শুক্রবার মাসজিদুল হারামে শায়েখ শুরাইম হাফিযাহুল্লাহ মা-বাবার সঙ্গে সদাচার বিষয়ক এক মর্মস্পর্ষী খুতবা দেন। খুতবায় তিনি যেমন কেঁদেছেনতেমনি কাঁদিয়েছেন মুসল্লীবৃন্দকেও। সে খুতবায় মাসিক আলকাউসারের সম্পাদক মহোদয়ও উপস্থিত ছিলেন। দেশে ফেরার পর তিনি আমাদেরকে বয়ানের সারমর্ম শোনান। আমাকে বলেনদেখো বয়ানটি আলকাউসারের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা যায় কি না। সম্পাদক মহোদয়ের বিবরণ এতটাই চিত্তাকর্ষক ছিল যেসঙ্গে সঙ্গে নেট থেকে খুতবাটি খুঁজে বের করি। ঘটনাক্রমে সেদিন ঢাকায় আমার দীর্ঘ কাজ ছিল। যানজট আর জনজটে নাভিশ্বাস তোলা ঢাকায় সঙ্গে করে খুতবাটি নিয়ে যাই। এত গাড়িএত মানুষএত শোরগোলের মধ্যেও বয়ানটি পড়তে গিয়ে আমার মনে হলজনমানবহীন সুশীতল কোনো উদ্যানে আমি শায়েখ শুরাইমের মন গলানো খুতবায় হারিয়ে গেছি। ঢাকায় কাজ শেষ করতে করতে অনেক রাত। সে রাতেই ফজর পর্যন্ত একটানা বয়ানের অনুবাদ শেষ করি। সঙ্গে কিছু হাওয়ালা যুক্ত করে দেই। কাজ শেষ করে মনে হলমা-বাবার প্রতি ভালবাসার অপূর্ব এক সঞ্চয় মনের ভেতর জায়গা করে নিয়েছে। যে সঞ্চয় আমৃত্যু পাথেয় জোগাবে। মনের মধ্যে সুখের এক অনুভূতি আমাকে আপ্লুত করে রেখেছিল। সুখটা হারিয়ে যায় কি না সে ভয়ে কাউকে বলতেও পারছিলাম না। সম্পাদক মহোদয়কে ছোট্ট করে শুধু একটি বার্তা লিখলামবয়ানটি পড়ে মা-বাবার প্রতিই দায়িত্ব বেড়ে গেছে। যদিও আমার সাধ্য খুবই সীমিত। -অনুবাদক

 

মা-বাবার প্রতি সদাচার একটি মহান মানবিক হকযার মতো গম্ভীর ও মর্যাদাপূর্ণ হক আর নেই। এ হক আদায় করে খোঁটা দেওয়া যায় না। এ হক আদায়ে অবহেলা করলে নিন্দা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি নেই।

ভালো অবস্থার পর মন্দ অবস্থাশৃঙ্খলার পর বিশৃঙ্খলাবজ্র আঁটুনির পর ফসকে যাওয়া এবং নিখুঁত বুননের পর ভেঙ্গে ফেলার চেয়ে জঘন্য কিছু নেই। সদাচারের প্রতিদানে অকৃতজ্ঞতাওয়াফাদারির প্রতিদানে গাদ্দারীদয়া-মায়ার প্রতিদানে রূঢ়তা ও কঠোরতাসযত্ন প্রতিপালনের প্রতিদানে অবাধ্যতার চেয়ে মারাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু নেইবরং বলা ভালোএমন মানুষের চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আর কেউ নেইযার জন্য জান্নাতের একটি দরজা খোলা হচ্ছে অথচ নিছক হেঁয়ালিপনার কারণে সে তাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করছে। বলা ভালোসে তার সামনে নাক সিটকে দাঁড়ায় তারপর পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে একেবারে ফিরে যায়নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় ওই স্থানে প্রবেশ করা থেকেযেখানে লুকিয়ে আছে তার দুনিয়া ও আখেরাতের চিরস্থায়ী সৌভাগ্য লাভের গোপন রহস্য।

মা-বাবার প্রতি সদাচার জান্নাতের দরজাসমূহের একটি। এ বিধানটি প্রণয়ন করা হয়েছে তাঁদের প্রতি ইহসান করার জন্য। দুনিয়ায় তাদের সুন্দর সঙ্গদানের জন্যউত্তম সঙ্গী হওয়ার জন্য। তাঁদের তরে ব্যয় করার জন্য। তাঁদের প্রতি বিনয়ের ডানা বিছিয়ে দেওয়ার জন্য। দুনিয়াতে মা-বাবা হলেন সন্তানের জন্য চন্দ্র-সূর্যের মতো। তাঁদের মাধ্যমে সন্তান চলার পথে আলো পায়। নিঃসঙ্গতা দূর করে। সান্ত্বনা লাভ করে। তাঁরা যেন ইউসুফ আ.-এর স্বপ্নের মতো। ইউসুফ আ. তার বাবাকে স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন-

یٰۤاَبَتِ اِنِّیْ رَاَیْتُ اَحَدَ عَشَرَکَوْکَبًا وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَاَیْتُهُمْ لِیْ سٰجِدِیْنَ.

হে বাবাএগারোটি চন্দ্রসূর্য ও নক্ষত্র আমাকে সিজদা করতে দেখেছি। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৪

বাবা যেন সূর্য। কারণ বাবা দিনের বেলা সন্তানের জন্য পরিশ্রম করে উপার্জন করেন। মা যেন চন্দ্রের মতো। কারণ মা তার জন্য স্নেহ ও দয়ার্দ্রতায় রাত্রি জাগরণ করেন।

দুনিয়াতে যেসব জিনিস মানুষের সৌভাগ্য নিশ্চিত করে তার মধ্যে একটি হলমা-বাবাকে জীবদ্দশায় পাওয়া। যেন তাঁদের প্রতি সদাচারের ঝরনা থেকে পানি পান করতে পারে। তাঁদের স্নেহ তৃপ্তিভরে পান করতে পারে। তাঁদের সন্তুষ্টির ছায়া লাভ করতে পারে। দুনিয়ার পরিবেশ ও ক্ষয়মান চাকচিক্যে তাঁরা সন্তানের জন্য ঢালস্বরূপ। দুনিয়ার ব্যথা-বেদনা ও ঝামেলার সময় তাঁরা সন্তানের স্নেহপূর্ণ আশ্রয়স্থল।

সন্তানের সুখী জীবনের গল্পই বলে দেয় মা-বাবার সাদা চুল ও বলিরেখা। সন্তানের সৌভাগ্যের জন্য তাঁরা কষ্ট করেন। সন্তানের আরামের জন্য তাঁরা পরিশ্রম করেন। সন্তানের ঘুমের জন্য তাঁরা জেগে থাকেন। সন্তানের নিরাপদ জীবনের জন্য তাঁরা বিপদের মুখোমুখি হন। সন্তান ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাদের বাহু কেঁপে ওঠে। বহু কষ্টে অশ্রু আটকে রাখেন। ঘরে না ফেরা পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করেন না।

সন্তানের হাসির জন্য মা-বাবা কাঁদেন। সন্তানকে খুশি করতে তাঁরা পেরেশান হন। সন্তানের সৌভাগ্যের জন্য তাঁরা কষ্টের মুখোমুখি হন। সন্তানকে আহার করানোর জন্য তাঁরা ক্ষুধার্ত থাকেন। সন্তানকে পান করানোর জন্য তাঁরা তৃষ্ণার্ত থাকেন। তাঁরা মোমবাতির মতো নিজেকে গলিয়ে সন্তানকে আলোকিত করেন। এ তো মায়ের মন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَ اَصْبَحَ فُؤَادُ  اُمِّ مُوْسٰی فٰرِغًا.

মূসার মায়ের অন্তর অস্থির হয়ে উঠল। -সূরা কাসাস (২৮) : ১০

এ তো বাবার চোখ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَابْیَضَّتْ عَیْنٰهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ کَظِیْمٌ.

দুঃখে তার চোখ সাদা হয়ে গেল। অসহনীয় মনস্তাপে তিনি ছিলেন ক্লিষ্ট। -সূরা ইউসুফ (১২) : ৮৪

এ হল প্রচণ্ড অনুভূতি ও স্পন্দিত আবেগসন্তানের জন্য মায়ের অন্তর অস্থির হয়ে ওঠা এবং বাবার চোখ সাদা হয়ে যাওয়া-

فَلَا تَقُلْ لَّهُمَاۤ  اُفٍّ وَّلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَّهُمَا قَوْلًا کَرِیْمًا  وَ اخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَۃِ  وَقُلْ رَّبِّ ارْحَمْهُمَا کَمَا رَبَّیٰنِیْ صَغِیْرًا .

তবে তাদেরকে উফ্ পর্যন্ত বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও নাবরং তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো। এবং তাদের প্রতি মমতাপূর্ণ আচরণের সাথে তাদের সামনে নিজেকে বিনয়াবনত করো এবং দুআ করোহে আমার প্রতিপালক! তারা যেভাবে আমার শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেতেমনি আপনিও তাদের প্রতি রহমতের আচরণ করুন। -সূরা বনী ইসরাঈল (৫০) : ২৩-২৪

কতই না সৌভাগ্যবান সে সন্তানযার বাবা-মা কিংবা সে দুনিয়া ছেড়েছে মা-বাবা সন্তুষ্ট অবস্থায়। কতই না ভাগ্যবানকতই না নির্মল তার জীবন। ইয়াস ইবনে মুআবিয়ার মা ইন্তেকাল করলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনআমার জন্য জান্নাতের দুটি দরজা খোলা ছিল। মায়ের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি দরজা বন্ধ হয়ে গেল। -তাহযীবুল কামাল ৩/৪৩৬

কতই না হতভাগা সে সন্তানযার বাবা-মা কিংবা সে দুনিয়া ছেড়েছে মা-বাবা অসন্তুষ্ট অবস্থায়। কতই না বিভ্রান্ত সেকতই না ক্ষতিগ্রস্ত। সে যোজন যোজন দূরে থাক আল্লাহর রহমত থেকে। কারণ আল্লাহ তাআলা মা-বাবার প্রতি সদাচারের কথা এনেছেন তাঁর ইবাদতের সঙ্গে। তিনি বলেছেন-

وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْئًا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ  اِحْسَانًا.

এবং আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর। -সূরা নিসা (৪) : ৩৬

তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার কথা এনেছেন তাঁর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন-

اَنِ اشْكُرْلِیْ وَ لِوَالِدَیْکَ اِلَیَّ الْمَصِیْرُ.

তুমি শোকর আদায় কর আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। আমারই কাছে (তোমাদেরকে) ফিরে আসতে হবে। -সূরা লুকমান (৩১) : ১৪

বরং আল্লাহ তাআলা আমল কবুল হওয়া এবং গুনাহ মাফের কারণগুলোর মধ্যে একটি কারণ বানিয়েছেন মা-বাবার প্রতি সদাচারকে। আল্লাহ তাআলা  কুরআনে বলেছেন-

وَ وَصَّیْنَا  الْاِنْسَانَ بِوَالِدَیْهِ  اِحْسٰنًا  حَمَلَتْهُ  اُمُّهٗ كُرْهًا وَّ وَضَعَتْهُ كُرْهًا  وَ حَمْلُهٗ  وَ فِصٰلُهٗ   ثَلٰثُوْنَ شَهْرًا حَتّٰی اِذَا بَلَغَ  اَشُدَّهٗ  وَ بَلَغَ  اَرْبَعِیْنَ سَنَۃً  قَالَ  رَبِّ اَوْزِعْنِیْۤ  اَنْ  اَشْكُرَ نِعْمَتَکَ الَّتِیْۤ  اَنْعَمْتَ عَلَیَّ  وَ عَلٰی وَالِدَیَّ  وَ اَنْ  اَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضٰهُ وَ اَصْلِحْ  لِیْ  فِیْ ذُرِّیَّتی اِنِّیْ  تُبْتُ  اِلَیْکَ وَ اِنِّیْ مِنَ الْمُسْلِمِیْنَ   اُولٰٓئِکَ الَّذِیْنَ نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ  اَحْسَنَ مَا عَمِلُوْا وَ نَتَجَاوَزُ عَنْ سَیِّاٰتِهِمْ فِیْۤ اَصْحٰبِ الْجَنَّۃِ  وَعْدَ الصِّدْقِ الَّذِیْ کَانُوْا یُوْعَدُوْنَ .

আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করার হুকুম দিয়েছি। তার মা তাকে অতি কষ্টে (গর্ভে) ধারণ করেছে এবং অতি কষ্টে তাকে প্রসব করেছে। তাকে (গর্ভে) ধারণ ও দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ হয় ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন তাঁর পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে এবং চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হয়তখন বলেহে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাওফীক দান করুনযেন আপনি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নিআমত দিয়েছেন তার শোকর আদায় করতে পারি এবং এমন সৎকর্ম করতে পারিযাতে আপনি খুশি হন এবং আমার জন্য আমার সন্তানদেরকেও (সেই) যোগ্যতা দান করুন। আমি আপনার কাছে তওবা করছি এবং আমি আনুগত্য প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এরাই তারাআমি যাদের উৎকৃষ্ট কাজসমূহ কবুল করব এবং তাদের মন্দ কাজসমূহ ক্ষমা করব। (ফলে) তারা জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবেতাদেরকে যে সত্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত তার বদৌলতে। -সূরা আহকাফ (৪৬) : ১৫-১৬

উমর রা. উয়াইস আলকারনী রাহ.-কে বলেছিলেনআমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামকে বলতে শুনেছিতোমাদের কাছে উয়াইস ইবনে আমের আসবে...। সে খুবই মা-ভক্ত। সে আল্লাহর নামে কসম করলে আল্লাহ তা পূরণের ব্যবস্থা করেন। তাকে দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিতে পারলে করো। তাই তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। উয়াইস রাহ. উমর রা.-এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। -সহীহ মুসলিমহাদীস ২৫৪২

অন্তরের গভীরে মা-বাবার প্রতি সদাচার জায়গা করে নিলে তা সুরক্ষিত দুর্গে পরিণত হয়। সে দুর্গ রক্ষা করে অহংকারকঠোরতাঅবাধ্যতা ও খারাপ কাজ থেকে। মা-বাবার প্রতি সদাচার এমন একটি শক্তিশালী গুণযা সব ধরনের খারাপ ও নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে রক্ষা করে। মা-বাবার প্রতি সদাচারী কাউকে মন্দ স্বভাবের দেখা যায় না। আবার মন্দ স্বভাবের কাউকে মা-বাবার প্রতি সদাচারী হতে দেখা যায় না। খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. ইবনে মেহরানকে খুব সুন্দর বলেছেনমা-বাবার অবাধ্য কারও সঙ্গী হয়ো না। সে তোমাকে গ্রহণ করবে না। কারণ সে ইতিমধ্যেই মা-বাবার অবাধ্য হয়েছে।

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণআল্লাহ তাআলা অহংকার ও মা-বাবার প্রতি সদাচারের মধ্যে পার্থক্য করেছেন।

যেমন তিনি ইয়াহইয়া আ.সম্পর্কে বলেছেনÑ

وَّ بَرًّۢا بِوَالِدَیْهِ وَلَمْ یَكُنْ جَبَّارًا عَصِیًّا.

সে (ইয়াহইয়া আ.) নিজ পিতা-মাতার খেদমতগার। সে অহংকারী ও অবাধ্য ছিল না।সূরা মারইয়াম (১৯) : ১৪

যেমন আল্লাহ তাআলা ঈসা আ.-এর ব্যাপারে বলেছেনÑ

وَّ بَرًّۢا بِوَالِدَتِیْ۫ وَلَمْ یَجْعَلْنِیْ جَبَّارًا شَقِیًّا.

এবং আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত বানিয়েছেন। আমাকে উদ্ধত ও রূঢ় বানাননি।-সূরা মারইয়াম (১৯) : ৩২

মা-বাবার মতো কেউ তোমাকে ভালবাসবে না। তাঁরা নিজ জীবন থেকে জীবন নিয়ে তোমাদেরকে দান করেন। হাঁতুমি যা চাও তাঁরা সব তোমাকে দিতে পারবেন না। কিন্তু তাঁদের যা আছে তার সবই তোমাকে দিয়ে দিয়েছেন।

মা-বাবার প্রতি সদাচার সন্তানের কাঁধে আমানতযতদিন মা-বাবা জীবিত আছেন। সদাচার পুরোনো হয় না। এর পুরোনো হওয়া উচিতও না। বরং দিন ও বছরের ব্যবধানে এর সৌন্দর্যদৃঢ়তা ও নতুনত্ব বৃদ্ধিই পায়। মা-বাবার প্রতি সদাচার সবসময় নবীন ও সজীব হতে হবে। মা-বাবা প্রবীণ হয়ে গেলেও সদাচার প্রবীণ হতে পারে না। মা-বাবা যেন সন্তানের কাছে বোঝা না হয় যেমা-বাবাকে সন্তানরা নিজেদের মাঝে ঠেকায় পড়ে ভাগাভাগি করে নেবেদায় থেকে বের হওয়ার জন্যসমালোচনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আসলে মা-বাবার প্রতি সদাচার দ্বীনও-দাইনওঅর্থাৎ ধর্মও আবার ঋণও। এটা দ্বীনী ও অপার্থিব প্রতিযোগিতা। সদাচারী সন্তান এতে স্বাদ অনুভব করে। এটা যেন তাকে জান্নাতের কোনো এক দরজায় নিয়ে যায়। এমনিভাবে এটা পার্থিব ঋণওতথা মা-বাবার কৃত অনুগ্রহযা তার জিম্মায় রয়ে গেছেসে তা পরিশোধ করে। এ ঋণ যতই পরিশোধের চেষ্টা করা হোক না কেনতা শোধ হবার নয়। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ইয়েমেনের এক লোককে দেখলেনমাকে কাঁধে বহন করতে। মাকে কাঁধে নিয়ে তাওয়াফ করতে করতে বলছিল-

إِنِّي لَهَا بَعِيرُهَا الْمُذَلَّلْ

إِنْ أُذْعِرَتْ رِكَابُهَا لَمْ أُذْعَرْ

الله رَبِّي ذُوالْجَلَالِ الأكْبَر

حَمَلْتُهَا أَكْثَرَ مِمَّا حَمَلَتْني

فَهَلْ تُرَى جَازَيْتُهَا يَا ابْنَ عُمَرْ؟

আমি মাকে বহন করা অনুগত উট।

তাঁর উট আতঙ্কিত হলেও আমি আতঙ্কিত হই না।

আল্লাহ আমার রবমহা পরাক্রমের অধিকারী।

মা আমাকে যতদিন গর্ভে ধারণ করেছেন তার চেয়েও বেশি আমি তাঁকে বহন করেছি।

হে ইবনে উমরতোমার কী মনে হয়আমি তাঁর প্রতিদান দিতে পেরেছি?

তিনি বললেননাজন্মের সময় তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও দিতে পারনি। -আলআদাবুল মুফরাদপৃষ্ঠা ১৮

আমাদের পূর্বসূরিগণ মা-বাবার প্রতি সদাচারের অনন্য উপমা পেশ করেছেন। মা-বাবার অনুগ্রহের সামনে নিজেদের সদাচারকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন। মদীনায় হাজারো খেজুর গাছ ছিল। উসামা ইবনে যায়েদ রা. নির্দিষ্ট একটি খেজুর গাছের মজ্জা কেটে আনলেন। কেউ এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনআমার মা এটা আমার কাছে চেয়েছেন। আমার সাধ্যের মধ্যে মা যা চান আমি করে দিই। -মাকারিমুল আখলাকপৃষ্ঠা ৫৫

আবু হুরায়রা রা. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে মাকে বলতেনমা আপনার উপর শান্তি ও রহমত নাযিল হোক।

মা বলতেনতোমার উপরও শান্তিরহমত ও বরকত নাযিল হোক।

তিনি বলতেনআল্লাহ আপনাকে রহম করুন যেমন আপনি আমাকে রহম করে ছোট বেলায় লালন-পালন করেছেন।

মা বলতেনতোমার প্রতিও আল্লাহ রহম করুন যেমন তুমি আমার সঙ্গে বৃদ্ধ বয়সে সদাচার করছ। -আলআদাবুল মুফরাদপৃষ্ঠা ১৮

সাঈদ ইবনে সুফিয়ান সাউরী রাহ. বলেনআমি বাবার সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করিনি। আমি নফল নামায পড়া অবস্থায় আমাকে ডাকলে আমি নামায ছেড়ে দিই। -মাকারিমুল আখলাক,  ইবনু আবিদ দুনয়াপৃষ্ঠা ৬৪

উমর ইবনে যার রাহ.-এর ছেলে মারা গেলে কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলসে কেমন সদাচারী ছিল?

তিনি বললেনদিনের বেলা পথ চললে সে আমার পেছনে থাকত। রাতের বেলা পথ চললে সে সামনে থাকত। আমি নিচে থাকলে কখনো সে ছাদে উঠত না। -আলবির ওয়াসসিলাইবনুল জাওযী ১/৮৯

এসব নজীর আমাদের পূর্বসূরিরা স্থাপন করে থাকলেও সময়ের আবর্তনে কিছু উত্তরসূরি আছেযারা মা-বাবার অবাধ্যতার নিকৃষ্ট ও জঘন্য নজির স্থাপন করেছে। মা-বাবাকে ত্যাগ করার মাধ্যমে অথবা তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশের মাধ্যমেকিংবা বন্ধু-বান্ধব ও স্ত্রীকে তাঁদের উপর প্রাধান্য দেওয়ার মাধ্যমে। মা-বাবাকে ছেড়ে গেলেতাঁদেরকে বোঝা মনে করলে কী-ইবা বলার আছে। যার পরিণামে তাঁদেরকে হাসপাতাল ও বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসে। কখনো কখনো আদালত ও পুলিশ মা-বাবার প্রতি বেদনাদায়ক অবহেলা নিয়ে শোরগোল করে। আল্লাহ সবাইকে এ থেকে রক্ষা করুন।

মা-বাবার অবাধ্য সন্তান কি জানেএ অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে সে কবীরা গুনাহে লিপ্ত হচ্ছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যাপারে বলেছেন-

أَلا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبائِرِ قُلْنابَلَى يا رَسولَ اللهِ، قالَالإشْراكُ باللهِ، وعُقُوقُ الوالِدَيْنِ، وكانَ مُتَّكِئًا فَجَلَسَ فقالَألا وقَوْلُ الزُّورِ.

আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব না?

একথাটি তিনি তিনবার বলেন।

সাহাবীগণ বললেননিশ্চয়ই ইয়া রাসূলাল্লাহ!

তিনি বললেনআল্লাহর সঙ্গে শরীক করামা-বাবার অবাধ্য হওয়াতিনি হেলান দেওয়া ছিলেনবসে বললেনসাবধান! আরেকটি হলমিথ্যা বলা। -সহীহ বুখারীহাদীস ২৬৫৪সহীহ মুসলিমহাদীস ৮৭

মা-বাবার প্রতি অবাধ্যরা একটু ভেবে দেখুককর্ম যেমন হয় ফলও তেমন হয়। মানুষ যে আচরণ করে প্রতিদানে সে তেমন আচরণই পায়। সদাচারের প্রতিদান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ পেয়ে যায়। অবাধ্যতাও ওরকমই। কিতাবুল বির ওয়াস সিলাতে কোনো কোনো আহলে ইলম যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তা নিয়ে পূর্ণ চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। একটি ঘটনা হলএক আলেম বলেছেনআমি মহল্লায় হাঁটছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে এক বৃদ্ধের দেখা পেলাম। তার ঘাড়ে একটি রশি। সে একটি পানির বালতি টানছে। দুপুর বেলা। উটও তা বহন করতে পারবে না। তখন প্রচণ্ড গরম। তার পেছনে এক যুবক। হাতে চামড়া পেঁচানো চাবুক। সে বৃদ্ধকে চাবুক মারছে। চাবুকের আঘাতে বৃদ্ধের পিঠ ফেটে গেছে। আমি বললামতোমার কি আল্লাহর ভয় নেই! এমন দুর্বল বৃদ্ধকে এভাবে মারছএ বোঝা কি তার জন্য যথেষ্ট নয় যে আবার তাকে মারতে হচ্ছে?

সে বললএ হল আমার বাবা।

আমি বললামআল্লাহ তোমার অমঙ্গল করুন।

সে বললচুপ কর। সেও তার বাবার সঙ্গে এমন করত। তার বাবাও তার দাদার সঙ্গে এমন করত। -আলমাহাসিন ওয়াল মাসাবিইবরাহীম ইবনে মুহাম্মাদ আলবাইহাকীপৃষ্ঠা ২৩৫

আমি বললামএ তো মানুষের মধ্যে চরম পর্যায়ের অবাধ্য।

কতই না হতভাগা সেযে তার মা-বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। কতই না হীন সে। মা-বাবার অসন্তুষ্টি নিয়ে সে কী করে সুখে থাকে। মা-বাবার পেরেশান অবস্থায় সে কী করে হাসে। মা-বাবা তার কারণে ক্ষুধার্ত থাকা অবস্থায় সে কীভাবে পেট ভরে আহার করে। সন্তান ও পরিবারকে মা-বাবার উপর কীভাবে প্রাধান্য দেয়। এমনটা সে কীভাবে করেঅথচ মা-বাবা নিজ হাতে তার ময়লা পরিষ্কার করেছেনখাওয়া-দাওয়ায় নিজেদের উপর তাকে প্রাধান্য দিয়েছেননিজেদের কোল তার জন্য দোলনা বানিয়েছেন। তাকে কোনো সমস্যা বা কষ্ট স্পর্শ করলে তাঁরা এতটা দুঃখিত হয়ে ওঠেন যেদুর্বল হয়ে পড়েন। সন্তানের জন্য জীবন অথবা মৃত্যুর কোনো একটা বেছে নিতে বললে তারা অতি অবশ্যই মৃত্যুকেই বেছে নেন।

মা সর্বদা মা-ই থাকেন। বাবা সর্বদা বাবা-ই থাকেনসন্তান যতই উচ্চবাচ্য করুকযতই ঝগড়া-বিবাদ করুকযতই গুরুতর অবাধ্য হোক। পুরোনো হওয়ার দ্বারা মা-বাবার অধিকার শেষ হয়ে যায় না। মা-বাবার অবাধ্যতা সমুদ্রের পানি দিয়ে ধৌত করলেও যায় না। তাওবার পর মা-বাবার অবাধ্যতার কাফফারা একটিইতা হলসদাচারসদাচার এবং সদাচার। এছাড়া ভিন্ন কিছু নেই।

হে মা-বাবার অবাধ্য সন্তানেরা! দ্রুতখুব দ্রুত আন্তরিক তওবা করোসত্যিকার সদাচার করোমা-বাবার মৃত্যুর মাধ্যমে সময় ফুরোনোর আগেই। মৃত্যুর পর তোমার ফেলা চোখের অশ্রু তাঁরা দেখবেন না। তাঁদের মৃত দেহ চুম্বন করাজড়িয়ে ধরাতাঁদের বিদায়ে তোমাদের দীর্ঘশ্বাসের কিছুই তাঁরা তখন অনুভব করতে পারবেন না। তাঁরা জীবদ্দশায় না দেখলে এসবের কোনোই মূল্য নেই। আল্লাহর শপথ! মা-বাবাকে পেয়ে তাঁদের সেবার মাধ্যমে তোমরা জান্নাতে যেতে না পারলে তোমাদের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্য।

এক লোক আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর কাছে এসে বললআমি এক লোককে হত্যা করে ফেলেছি। আমার কি তাওবার সুযোগ আছে?

তিনি বললেনতোমার মা কি জীবিত আছেন?

সে বললনেই।

তিনি বললেনবেশি বেশি ইস্তেগফার পড়।

লোকটি চলে গেলে আতা ইবনে ইয়াসার রাহ. ইবনে আব্বাস রা.-কে বললেনআপনি তাকে তার মায়ের কথা কেন জিজ্ঞেস করলেন?

ইবনে আব্বাস রা. বললেনআল্লাহর কাছে মায়ের প্রতি সদাচারের চেয়ে কোনো প্রিয় আমল আছে বলে আমার জানা নেই। -আলআদাবুল মুফরাদপৃষ্ঠা ১৫

হে আল্লাহর বান্দারাআল্লাহকে ভয় করুন। জেনে রাখুন প্রত্যেক ফলেরই বীজ আছে। প্রত্যেক বীজের জন্যই পানির প্রয়োজন হয়। মা-বাবার প্রতি সদাচারও তাই। এর বীজ আছে। এই বীজের জন্যও পানি লাগে। মা-বাবার করণীয় হলসন্তানের তরবিয়ত ভালোভাবে করা। তাদেরকে নেককার হিসেবে গড়ে তোলা। ফসল তোলার দিন ফল কাটা হয়। ফল কাটার পর স্পষ্ট হয় ফল মিষ্টি না তেতো। যে ভালোভাবে বপন করে ও যতন করে সে ভালো ফসল তোলে। যে ভূমি উৎকৃষ্টতার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয়যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয়।

মা-বাবারা মনে রাখবেনমা-বাবার প্রতি সদাচার সুন্দর তরবিয়তমমতান্যায় ও অর্থ খরচের মতো ভূমিকার ফলাফল। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করুনসন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করুন। যেন মা-বাবার প্রতি সদাচারের বেলায় তারা বরাবর হয়।

আহনাফ ইবনে কায়েস মুআবিয়া রা.-এর কাছে গেলেন। সামনে তাঁর ছেলে ইয়াযীদও ছিল। মুআবিয়া রা. আহনাফ রাহ.-কে জিজ্ঞেস করলেনহে আবু বাহ্রসন্তানের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?

তিনি বললেনহে আমীরুল মুমিনীনতারা আমাদের পিঠের খুঁটি। আমাদের অন্তরের ফসলআমাদের চোখের শীতলতাতাদের মাধ্যমেই আমরা আমাদের শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের পরবর্তীদের জন্য তারা আমাদের উত্তরসূরি। তাদের জন্য হোন সহনশীল ভূমি এবং ছায়াদার আকাশ। তারা চাইলে দিন। তারা অনুগ্রহ পেতে চাইলে অনুগ্রহ করুন। আপনার সমর্থন তাদের থেকে উঠিয়ে নেবেন না। ফলে তারা আপনার সান্নিধ্যের ব্যাপারে ত্যক্ত হয়ে উঠবে। আপনার জীবন অপছন্দ করবে। আপনার মৃত্যু বিলম্বিত হচ্ছে বলে মনে করবে।

মুআবিয়া রা. বললেনআপনার জ্ঞান-গরিমা আল্লাহ্ কর্তৃকই প্রদত্ত হে আবু বাহ্র। আপনি যেমনটা বলেছেন সন্তানেরা তেমনই। -আলইকদুল ফারীদ ২/২৭৩

হে সন্তানেরা! মা-বাবার বদদুআ থেকে খুব সতর্ক থেকো। সন্তান গুরুতর কোনো অবাধ্যতার শিকার হলেই কেবল মা-বাবা বদদুআ করেন। শৈশবে তাঁরা সন্তানকে কোলে নিয়েছেননিজে ক্ষুধার্ত থেকে সন্তানকে আহার করিয়েছেনপ্রচ- কান্নায় অশ্রু সংবরণ করেছেনসন্তান যখন বড়  হয়ে গেলবোধ ও শক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেল সে তার অবাধ্যতার তরবারি উন্মুক্ত করল এবং অবজ্ঞার তীর বের করল- এসব ক্ষেত্রেই মা-বাবার মুখ থেকে অপ্রতিরোধ্য বদদুআ আসে। সে ব্যক্তির ধ্বংস অনিবার্যযার জন্য মা-বাবা বদদুআ করেন। তার জন্য ধ্বংস এবং ধ্বংস। মা-বাবার মুখ থেকে তখনই বদদুআ বের হয় যখন সন্তানের অবাধ্যতা মা-বাবার অনুভূতিকে পিষে ফেলেসন্তানের অকৃতজ্ঞতার তিক্ততায় নীল হয়ে যান। তখনকার ভাঙ্গা মনের কথা জিজ্ঞেস করো না। চরম তিক্ততা সেসব দুআকে তীব্র ও শাণিত করে। অবাক হওয়ার কিছু নেইএ তো ব্যথিত মনের দুআ। তা কবুল হওয়ার মতই। যেমনটা এক পূর্বসূরি তার অবাধ্য সন্তানের জন্য বদদুআ করতে গিয়ে বলেছেন-

وَإنِّي لَدَاعٍ دَعْوَةً لَوْ دَعَوْتُها

عَلى جَبَلِ الرَّيَّانِ لَانْهَدّ جَانِبُه

আমি এমন দুআ করবযে দুআ রাইয়ান পাহাড়ের বিরুদ্ধে করলে তার এক পাশ ধসে যেত।

হে সন্তানেরা! আল্লাহকে ভয় করো। উফ কথাটাকে হালকা মনে করো না। এই শব্দটা দুই অক্ষরের এবং বলতে সহজ হলেও শব্দটার ব্যবহার সুস্পষ্ট অপরাধ এবং তা অবাধ্যতার সংক্ষিপ্ত রূপ। মনে রেখযারা মা-বাবার প্রতিক্রিয়ার তোয়াক্কা করে নানিঃসন্দেহে তারা নাফরমান ও অপরাধী।

হে স্বামী এবং স্ত্রীআল্লাহকে ভয় করো। একে অপরকে মা-বাবার প্রতি সদাচারের বেলায় সহায়তা করো। সেই ছেলের স্ত্রীরা খারাপসেই মেয়ের স্বামীরা খারাপযারা মা-বাবার প্রতি সদাচার ও সম্পর্ক রক্ষায় একে-অপরকে সহযোগিতা করে না।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে মা-বাবার প্রতি সদাচারী হওয়ার তাওফীক দান করুন। হ

 

অনুবাদ : ওয়ালিউল্লাহ আব্দুল জলীল

মন্তব্য করুন: