পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ

ছবি- ইন্ডিয়া টুডে
ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তান থেকে ভারতের ১৫টি শহরে ব্যর্থ হামলার কয়েক ঘণ্টা পর কাশ্মীরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সীমান্তবর্তী আরএস পুরা, আরনিয়া, সাম্বা ও হিরানগর এলাকায় পাকিস্তান ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে এবং জম্মু শহরে বিমান হামলারও অভিযোগ ওঠে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর প্রকাশ করেছে। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ সূত্রে এসব অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
জিও নিউজ রয়টার্স সূত্রে জানিয়েছে, জম্মু শহরে রাতে পরপর দুটি বিস্ফোরণ ও সাইরেনের শব্দ শোনা যায় এবং এরপরই পুরো শহরে বিদ্যুৎবিভ্রাট ঘটে।
এনডিটিভি আরও জানিয়েছে, স্থানীয়রা মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে আকাশে আলো ঝলকাতে দেখেছেন, যা পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহতের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তানের ছোড়া আটটি ক্ষেপণাস্ত্র আরএস পুরা, আরনিয়া, সাম্বা ও হিরানগর লক্ষ্য করে উৎক্ষেপণ করা হয়, তবে ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা সম্পূর্ণরূপে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। উল্লেখ্য, এসব এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা রয়েছে।
এছাড়া ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র দাবি করেছে, পাকিস্তানের সারগোধা বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়নকৃত একটি এফ-১৬ সুপারসনিক যুদ্ধবিমান ভারতীয় ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা ভূপাতিত করা হয়েছে।
কাশ্মীরের পাশাপাশি পাকিস্তান থেকে ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট এলাকায়ও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পাঠানকোট অঞ্চলটি কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং জম্মুর প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত। সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলো—পাঞ্জাব ও রাজস্থানের চণ্ডীগড়, ফিরোজপুর, মোহালি ও গুরুদাসপুর এলাকায় ব্ল্যাকআউট ঘোষণা করা হয়েছে।
এই উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিতব্য আইপিএল ম্যাচ—পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস—বাতিল করা হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম খালি করে দেওয়া হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এর আগে ভারত দাবি করেছিল, বুধবার রাতে পাকিস্তান ভারতের শ্রীনগর, পাঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা ও চণ্ডীগড়সহ ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনার ওপর হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় বাহিনী ব্যর্থ করে দেয়। এর জবাবে ভারত পাকিস্তানের লাহোরসহ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানের এয়ার ডিফেন্স রাডার লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “পাকিস্তানের আগ্রাসনের জবাবে আমরা একই মাত্রায় এবং তীব্রতায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। ভারত সংঘর্ষে জড়াতে চায় না, তবে সাড়া দিতে পিছপা হবে না।”
ভারতের এসব সামরিক অভিযানের দাবি “মিথ্যা ও ভিত্তিহীন” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। জিও নিউজ-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি নিরাপত্তা সূত্র জানায়, “ভারতের এসব প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে পাকিস্তানের ওপর হামলার যৌক্তিকতা তৈরি করা যায়।”
তারা আরও দাবি করে, “সম্প্রতি অমৃতসরে হামলার ভুয়া খবর ছড়িয়ে পাকিস্তানকে শিখ সম্প্রদায়ের শত্রু হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এবার কাশ্মীর ইস্যুতে ভুয়া হামলার প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
এই সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূচনা ঘটে কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার পর, যেখানে ২৬ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর ভারত “অপারেশন সিঁদুর” নামে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যাকে ভারত “নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট” হামলা বলে উল্লেখ করে।