আ.লীগের দৃশ্যমান বিচার চায় ইনকিলাব মঞ্চ

জুলাই গণহত্যা, শাপলা চত্বরে ম্যাসাকার এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দায়ে আওয়ামী লীগের দৃশ্যমান বিচার দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। একইসঙ্গে দলটি দাবি জানিয়েছে—আওয়ামী দোসর ও সন্ত্রাসীদের দমন করতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দিতে হবে।
রবিবার (১১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বীন হাদী এসব দাবি তুলে ধরেন।
শরীফ ওসমান হাদী বলেন, “বিগত ১৫ বছরে পুলিশ জনগণের বিরুদ্ধে ম্যাসাকার করেছে, মামলা বাণিজ্য করেছে। এই সময়টাতে পুলিশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ যাদের বিষয়ে সুপারিশ করেছে, শুধু তাদেরকেই পুলিশে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে কারা যাবে, সেটাও শেখ হাসিনার কামরা থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “বিসিএসের পুলিশ এবং পররাষ্ট্র ক্যাডারে যাদের সুপারিশ করা হয়েছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগের দোসর।”
হাদী বলেন, “নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী অন্তর্ঘাত করবে, তাদের বিরুদ্ধে পূর্বের নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে এক বছরের মধ্যে ৪০-৫০ হাজার নতুন পুলিশ সদস্য নিয়োগ দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে অনেক যুবক বেকার। এই দশ মাসে সরকার নতুন করে পুলিশ নিয়োগ দিলে বহু তরুণের কর্মসংস্থান হতো। এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।”
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র অভিযোগ করে বলেন, “ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদকে প্রটোকল দিয়ে দেশ থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে—এটা আমরা ভুলিনি। তাকে প্রটোকল দিয়েছে কারা—বিএনপি না জামায়াত? কেন নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না?”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “জাতীয় পার্টির নাম এই প্রজ্ঞাপনে কেন নেই? তারা কি দুধে ধোয়া? তারা কি বিনা ভোটে এমপি হয়নি? ১৪ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিকদের নামও নেই—কেন?”
শরীফ ওসমান হাদী অভিযোগ করেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আগে থেকেই উল্লেখ ছিল যে, এই ট্রাইব্যুনাল যেকোনো দলের বিচার করতে পারবে। অথচ সরকার বলছে, নতুন করে আইন সংশোধন করে এটা যোগ করা হয়েছে। তাহলে কোন উপদেষ্টা এই ধারা বাদ দিয়েছে? আসিফ নজরুল স্যার জানুয়ারিতে বলেছিলেন, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল হবে—কিন্তু মে মাসে এসে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এতদিন কেন অপেক্ষা করা হলো?”
সংবাদ সম্মেলনে হাদী বলেন, “সরকার যে সিদ্ধান্ত গতকাল ঘোষণা করেছে তা আরও ১০ মাস আগেই নেওয়া উচিত ছিল। এটা তাদের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই হওয়া দরকার ছিল। আমরা মনে করি না যে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় আমরা আমাদের অন্যান্য দাবি ভুলে যাব। দ্রুত জুলাই গণহত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার শুরু করতে হবে।”
তিনি সরকারের প্রতি তিনটি প্রস্তাবনা পেশ করেন:
১. দুইটি ট্রাইব্যুনাল গঠন: প্রথম ট্রাইব্যুনাল ব্যক্তির বিচার করবে, দ্বিতীয়টি দলের বিচার করবে।
২. তওবা কমিশন গঠন: যেসব আওয়ামী সমর্থক অপরাধে জড়িত নয়, অথচ মামলায় ভুক্তভোগী হয়েছে, তাদের দায়মুক্তি দিতে কমিশন গঠন করতে হবে।
৩. জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান: আগামী ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট)-এর মধ্যে সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ “জুলাই ঘোষণাপত্র” প্রকাশ করতে হবে।