রোজা ও রমজান: পর্ব-০৮ বিষয়: মাহে রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করা

৫. বেশি করে দুআ, দুরুদ ও তাসবীহ পাঠ করাঃ দুআ করা ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। দরুদের কিছু ফযিলতের কথা অনেকেরই জানা। রমযান মাসে বেশি করে দুআ-দরুদ ও তাসবীহ পাঠ করা উচিত। সাহাবী এবং তাবেয়ীগণের সময়ে তারবীহর চার রাকআত পরপর বেশ কিছু সময় বিশ্রামের সুযোগ হতো। এ সময়ে তাঁরা কিছু দুআ, দরুদ এবং তাসবীহ পাঠ করতেন। আমাদের কিছু কিছু সমাজে তারাবীহর সালাতের মাঝে ও শেষে যে দুআ ও মুনাজাত প্রচলিত আছে তা কোনো হাদীসে বা পূর্ববর্তী ফিকহের কিতাবে পাওয়া যায় না। পরবর্তী আলিমগণ এই দুআ ও মুনাজাত বানিয়েছেন। এই দুআর অর্থের মধ্যে কোনো ভুল নেই। সে হিসাবে এই দুআগুলোও পড়তে নিষেধ নেই। তবে অনেকে মনে করেন যে, এই দুআ ও মুনাজাতটি বোধহয় তারাবীহর অংশ। কিংবা মনে করেন যে, এই দুআগুলো না পড়লে তারাবীহের সালাতে সওয়াব কম হবে। এমনকি অনেকে দুআ ও মুনাজাত না জানার কারণে তারাবীহ পড়েন না। এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সুতরাং তারাবীহর সালাতের মাঝে এবং শেষে যে দুআগুলো পড়া হয় ঐ সময় মাসনূন দুআ, যিকির-আযকার ও দরুদ পড়া অনেক উত্তম।
৬. সম্ভব হলে ওমরা আদায় করাঃ হাদীসে এসেছে-
قَالَ فَإِنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَقْضِىْ حَجَّةً مَعِىْ
রমযান মাসে ওমরা আদায় করা, আমার সাথে হজ¦ আদায় করার সমতুল্য। বুখারী, হাদীস-১৮৬৩
৭. বেশি করে সদকা বা দান করাঃ হাদীসে এসেছে, বেশি করে দান করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় ইবাদত। রমযান মাস এলে তিনি বেশি বেশি দান করতেন। হাদীসে এসেছে-
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ
‘নবী (সা.) ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি দানশীল। আর রমযান মাসে তাঁর দান আরো অনেক বেড়ে যেত।’ সহীহ বুখারী, হাদীস- ৬
দান করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। দানের কারণে গুনাহ মাফ হয় এবং বালা-মুসিবত দূর হয়। তবে হালাল সম্পদ থেকে দান করা উচিত।
প্রিয় উপস্থিতি! এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করা উচিত যে, আমাদের বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের ইতিহাসে আমরা দেখেছি যে, রমযান মাস এলেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। অর্থাৎ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম অনেক বেড়ে যায়। অথচ বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এদেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা মুসলিম। আবার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা সিয়াম পালন করেন। দান-খয়রাতও করেন। এসব ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যবসায়ী এমনও আছে যারা গুদামজাত করেন এবং রমযানে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন। এছাড়া অনেক ছোট-ছোট ব্যবসায়ীরাও রমযান মাসে স্বাভাবিক দামের চাইতে অনেক দামে পন্য বিক্রি করেন। রমযান উপলক্ষে এমনটা করা মোটেও ঠিক নয়। আর গুদামজাত করে পণ্যের মূল্যকে বৃদ্ধি করা নিষিদ্ধ এবং অবৈধ বা নাজায়েয। সুতরাং গুদামজাত বা অন্যান্য অবৈধ পদ্ধতিতে বা হারাম পদ্ধতিতে উপার্জিত টাকা থেকে লক্ষ-কোটি টাকা দান করার চাইতে হালাল বা বৈধ পদ্ধতিতে উপার্জিত টাকা থেকে এক টাকা দান করাও অনেক বেশি সওয়াব ও উত্তম আমল হিসেবেই পরিগণিত হবে। আমরা মহান আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন আমাদেরকে হালাল টাকা থেকে ব্যয় করার তাওফিক দান করেন।
লেখক: মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন, 01712961470