শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব-০৭ বিষয়: মাহে রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করা

মুফতি মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন

 আপডেট: ১৫:৫০, ২৮ মার্চ ২০২৩

রোজা ও রমজান: পর্ব-০৭ বিষয়: মাহে রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করা

৪. সাহরী ও ইফতার করা এবং অন্যকে করানোঃ সাহরী ও ইফতার করা গুরুত্বপূর্র্ণ সুন্নত। হাদীসে এসেছে-
تَسَحَّرُوْا فَإِنَّ فِىْ السَّحُوْرِ بَرَكَةٌ
‘তোমরা সাহরী গ্রহণ কর। সাহরীতে বরকত রয়েছে।’ সহীহ বুখারী, হাদীস-১৯২৩


সাহরী ও ইফতার করার অর্থ এই নয় যে, সারাদিন যেহেতু পানাহার হয়নি, সেহেতু দু’সময়ের জন্য দ্বিগুণ খেয়ে নেওয়া। এরূপ খেলে তো সিয়ামের মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হলো। সাহরী ও ইফতারী গ্রহণের অর্থ হচ্ছে স্বাভাবিকভাবে আমরা যা খাই তা খাওয়া। সমাজে প্রচলিত আছে যে, সাহরী ও ইফতারীতে বা রমযান মাসে যা খাওয়া হবে তার হিসাব হবে না। এজন্য আমরা রমযান মাসকে খাওয়ার মাস বানিয়ে ফেলেছি। বস্তুত, হিসাব হবে কিনা তা চিন্তা না করে, সওয়াব কিভাবে বেশি হবে তা চিন্তা করা উচিত। রমযান মাস মূলত অন্যকে খাওয়ানোর মাস। এটা দুভাবে করা যায়, প্রথমত দরিদ্রকে খাওয়ানো। হাদীসে এসেছে, দরিদ্রদেরকে খাওয়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) রমযান মাসে বেশি করে দান করতেন। দ্বিতীয়ত সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানো। হাদীসে এসেছে-
مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يُنْقَصَ مِنْ أَجْرِ الصَائِمِ شَيْئًا،
‘যদি কেউ কোনো সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত সিয়াম পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তবে এতে উক্ত সিয়াম পালনকারীর সওয়াব একটুও কমানো হবে না।’ সুনানুত তিরমিযি,  হাদীস-৮০৭ (ইমাম তিরমিযি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ) 


সম্মানিত পাঠক! সিয়াম পালনের নিয়্যত সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে, পুস্তিকাতে যে সব নিয়্যত দেখি এবং পড়ি এসব সম্পূর্ণ বানানো কথা। হাদীসে এ সব নেই। কারণ নিয়্যত হচ্ছে মনে মনে সংকল্প করা। সংকল্প করার জন্য কোনো বাক্য বলতে হয় না। তবে ইফতার গ্রহণের পূর্বে দুআ রয়েছে। ইফতারের পূর্বে ইফতারকে সামনে নিয়ে এই দুআ পড়াঃ
يَا وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْ لِىْ
‘হে মহান ক্ষমা দানকারী, আমাকে ক্ষমা করুন।’ শুয়াবুল ঈমান ৩৯০৩


আর ইফতারের সময় এই দুআ করাঃ 
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ
‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিয়াম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিকের দ্বারাই ইফতার করছি।’ আবু দাউদ, হাদীস-২৩৬০
ইফতারের পর এই দুআ পড়াঃ
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
‘পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, রগগুলো সিক্ত হয়েছে। সওয়াব লেখা হয়েছে ইনশা-আল্লাহ।’ আবু দাউদ, হাদীস-২৩৫৯
কারো বাড়িতে ইফতার করলে এই দুআ পড়াঃ
أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ
‘সিয়াম পালনকারীগণ তোমাদের সাথে ইফতার করেছেন এবং নেককারগণ তোমাদের খানা আহার করেছেন। ফিরিশতাগণ তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করেছেন।’ আবু দাউদ, হাদীস-৩৮৫৬ 


অতএব আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা উচিত নিজেদের খাবার থেকে সামান্য কমিয়ে নিয়মিত অন্যদেরকে ইফতার করানো। বিশেষত দরিদ্র, কর্মজীবি, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর অনেকেই কষ্ট করে সিয়াম পালন করে এবং ইফতার করতেও তাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই সাধ্যমত নিজের খাবার একটু কমিয়ে এদেরকে খাওয়ানো প্রয়োজন।

 

লেখক: মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন এই নাম্বারে 01712961470

মন্তব্য করুন: