মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১০ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

কবিতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইসলামী স্বর্ণযুগের বিখ্যাত বিজ্ঞানী

 প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৫ জুলাই ২০২১

কবিতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা ইসলামী স্বর্ণযুগের বিখ্যাত বিজ্ঞানী

“এক সোরাহি সুরা দিও,একটু রুটি ছিলকে আর,
প্রিয় সাকি,তাহার সাথে একখানি বই কবিতার,
জীর্ণ আমার জীবন জুড়ে রইবে আমার প্রিয়া আমার সাথ,
এই যদি পাই চাইবনা কো তখত আমি,শাহানশার।“

চতুষ্পদী কবিতার অমর সংকলন রুবাইয়াৎ রচয়িতা ওমর খৈয়ামের নাম শুনিনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। মধুর সব কবিতার এই রচয়িতার আড়ালেই যে রয়েছে বিখ্যাত এক গণিতবিদ তা আমাদের অনেকেরই অজানা। 

তুর্কি বংশোদ্ভুত খৈয়ামের জন্ম ইরানের খোরাসানের নিশাপুরে। তাঁর পূর্বপুরুষেরা তুর্কিমিনিস্তানের বাদখসান থেকে নিশাপুরে এসে বসতি স্থাপন করেন। সেখানেই ১০৪৮ সালের ১৩ই জুন জন্ম হয়। খৈয়ামের পুরো নাম ঘিয়াত আদ-দীন আবুল ফাতাহ ওমর ইবনে ইব্রাহিম আল খৈয়াম। পিতার নাম ইব্রাহীম খৈয়াম, মাতার নাম আরজুমন্দ। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে খৈয়াম পরিচিত ছিলেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও গাণিতিক হিসাবে। ১০৭০ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সেই তিনি ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান করে ফেলেন। প্রথমত জ্যামিতিক পদ্ধতিতে সমাধান করলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি তিনি। ফলে পরবর্তিতে বীজগানিতিক উপায়ে সমাধান করেন। ওমর খৈয়ামের মৃত্যুর প্রায় পাঁচশো বছর পর্যন্ত ত্রিঘাত সমীকরণের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। 

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এসে এবং পুরো বিংশ শতাব্দী ধরে ওমর খৈয়ামের কাব্যচর্চা বিশ্বমানসে একটি চিরস্থায়ী ছাপ ফেলে দেয়। কাজী নজরুল ইসলাম,  “রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম” এর ভূমিকায় বলেন- ওমরের রুবাইয়াৎ এর চারটি পদই ছুটেছে আরবি ঘোড়ার মতো দৃপ্ত তেজে সমতালে ভন্ডামি, মিথ্যা বিশ্বাস, সংস্কার বিধি-নিষেধের পথে ধূলি উড়িয়ে তাদের বুক চির্ণ করে। বাংলা ভাষায় কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়াও কান্তি ঘোষ, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নরেন দেব, সৈয়দ মুজতবা আলী সিকান্দার আবু জাফর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়সহ অনেকে রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম অনুবাদ করেছেন। তবে কাজী নজরুল ইসলাম ফারসি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন, যা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে এক অপূর্ব ও অসাধারণ অবদান।

১০৭৩ সালের দিকে ওমর খৈয়ামের জীবন মোড় নেয় অন্যদিকে। সেলজুকের সুলতানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি এমন একটি মানমন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন যা দিয়ে অন্তত ৩০ বছর আকাশ পর্যবেক্ষণ করা হবে। খৈয়াম সে সময়ে বছরে ৩৬৫.২৮২২ দিনের যে হিসেব বের করেছিলেন তা আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। তার তৈরি করা ক্যালেন্ডার চালু ছিলো ২০ শতক পর্যন্ত। 

ভূগোল, বলবিদ্যা, খনিজবিজ্ঞান, আইন, এমনকি সঙ্গীতও বাদ যায়নি তার জ্ঞানপিপাসার তালিকা থেকে। জীবনের শেষ দিকে এসে হয়েছেন শিক্ষক; শিক্ষাদান করেছেন ইবনে সিনার দর্শন ও গণিত বিষয়ে।

শুরু করেছিলাম তার কবিতা দিয়ে শেষও করছি খৈয়ামের আরেকটি রুবাই দিয়ে।

অমর কেউ নয় এ দুনিয়ায়
এই কথাটায় সব’চে দামি,
ফোটার পরেই ফুল যে ক্রমে
ঝরার দিকে পড়ে ঢলে।

ইসলামী স্বর্ণযুগের অন্যতম বিজ্ঞানী ও কবি এই ব্যক্তি ৪ ডিসেম্বর ১১৩১ সালে ৮৩ বছর বয়সে জন্মস্থানেই মৃত্যুবরণ করেন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: