মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, বৈশাখ ৩০ ১৪৩২, ১৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

শ্রীনগরজুড়ে বিস্ফোরণ, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওমর আব্দুল্লাহর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত: আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ ‘চলবে’, শনিবার গণজমায়েত ড্রোন যুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান বিরোধের নতুন অধ্যায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আ.লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়বেন না আন্দোলনকারীরা ‘আপ বাংলাদেশ’–এর আত্মপ্রকাশ পূর্বঘোষণা ছাড়া ভারত সফরে সৌদি প্রতিমন্ত্রী, পাকিস্তান-ভারত উত্তেজনায় কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে মার্চের হুঁশিয়ারি নাহিদ ইসলামের দেশীয় ওষুধ কোম্পানি রেনাটাকে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে আইএফসি তারেক রহমান: সরকার হয়তো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করছে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতের নির্দেশে ৪ বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ইউটিউবে বন্ধ

ইসলাম

জুলুম : এনজিও-ওয়ালাদের কিস্তিকাহিনী

 আপডেট: ১৮:২১, ২৮ অক্টোবর ২০২২

জুলুম : এনজিও-ওয়ালাদের কিস্তিকাহিনী

গত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’-এর আঘাতে দক্ষিণ বঙ্গের প্রায় ছয়টি জেলার লাখ লাখ মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েন। আপনজন মারা যান, ঘরবাড়ি ভেসে যায় এবং আয়-উপার্জনের কোনো উপায়ই খোলা থাকে না- এমন মানুষের সংখ্যা সেখানে বিপুল। ঘূর্ণিঝড়ের পর পর সরকারি-বেসরকারি, দেশী-বিদেশী, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে সে বিপুল বিপন্ন মানুষ আল্লাহ তাআলার দয়ায় আবারো জীবন ও সংসারের চাকা সচল করতে ধীরে ধীরে সক্ষম হয়ে উঠছেন। বিপন্ন মানুষের পাশে সাহায্যকারী মানুষদের সরব উপস্থিতি সেখানকার বিধ্বস্ত চিত্রটাকেই কিছুটা আশাবাদী ও আশাব্যঞ্জক করে তুলেছে।

সব হারানো, সব খুয়ে ফেলার কান্নার দাগ যেখানে নানাভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা সক্রিয়, সেই দুর্গত অঞ্চলেই আবার পূর্বে দেয়া ঋণের সুদসহ কিস্তি আদায়ের নামে শুরু হয়েছে এক বিভৎস মহড়া। বিপন্ন মৃতবৎ মানুষের উপর এ যেন শকুনের ঝাঁপিয়ে পড়ার গল্প। শত-হাজার কোটি টাকার মালিক প্রভাবশালী এনজিওগুলো হচ্ছে এ গল্পের শকুন। দরিদ্র মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তোলা এবং নানাভাবে তাদের সাহায্য-সহযোগিতার শ্লোগানে মুখে ফেনা তুলতে তুলতে এসব এনজিওর অস্তিত্ব লাভ, বিকাশ ও সাম্রাজ্য বিস্তার ঘটেছে। দেশ-বিদেশে নাম ফাটানো, পদক কামানোসহ কী না করেছে তারা! কিন্তু এবারের সিডর আক্রান্ত বিপন্ন মানুষগুলোর মধ্যে যারা তাদের কাছ থেকে পূর্বে ঋণ নিয়েছিল, তাদের ওপর এনজিওগুলোর স্থানীয় প্রতিনিধিরা এমনভাবে চড়াও হয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এনজিও-তোষণকারী

জাতীয় মিডিয়াগুলোও ‘মুখ’ খুলতে বাধ্য হয়েছে। কোনো কোনো পত্রিকায় এনজিওগুলোর এই শকুন মার্কা চরিত্র নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গেলে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধান পর্যন্ত এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় কয়েক মাসের জন্য স্থগিত করতে বলেছেন, তা সহজেই বুঝে আসে।

 

এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে একদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে মিডিয়ার কাছে দাবি করা হয়, দুর্গত অঞ্চলে কিস্তি আদায় বন্ধ আছে, অপর দিকে দুর্গত অঞ্চলের এনজিও-প্রতিনিধিরা ‘বীরদর্পে’ কিস্তি তুলতে গিয়ে বলে- কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদেরকে কিস্তি না তোলার জন্য কিছুই বলা হয়নি। একদিকে এনজিও কর্মকর্তারা দুর্গত অঞ্চলের মানুষের জন্য মুখে চুক চুক করেন, অপর দিকে জানা যায় স্থানীয় এনজিও-কর্মীদের বেতন ভাতার বিষয়টি সেখানকার ঋণ গ্রহীতা থেকে (সে যত বিপন্নই হোক না কেন) কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় করে নেওয়ার নিয়ম অক্ষুণ্ণ রাখা হয়।

সেবার নামে এ যেন এনজিও মহাজনের গরিব-মারা এক চোর-পুলিশ খেলা। ঢাকায় বসে মিডিয়াগুলোতে ‘ভালো মানুষ’ সাজার জন্য ব্যাপক ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে আর দুর্গত অঞ্চলগুলোতে বাস্তব ক্ষেত্রে নিঃস্ব মানুষকে কিস্তি দেওয়ার  জন্য ধাওয়া করছে। এদেশের কথাসাহিত্য আর প্রবাদে নির্মমতার সঙ্গে সুদসহ ঋণ আদায়ের জন্য বহুদিন ধরে ‘কাবুলিওয়ালা’দের কথা বলা হয়।

এখন দেখা যাচ্ছে ‘কাবুলিওয়ালা’রাও এই ‘এনজিও-ওয়ালা’দের কাছে নস্যি ছিল। প্রভাবশালী নব্য-সুদী মহাজন ‘এনজিও-ওয়ালা’রা সিডর বিধ্বস্ত দুর্গত অঞ্চলে যে ‘কৃতিত্ব’ দেখালেন তার জন্য সরকারের উচিত তাদের কিছু ‘পুরস্কৃত’ করনের ব্যবস্থা করা। একবার দু’বার কিস্তি মওকুফের মৌখিক আহবান জানানোর ফলে সে ‘পুরস্কারদানে’র কাজটি পূর্ণাঙ্গ হয় না। দুর্যোগে পড়ে গরিব ও নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মানুষের সঙ্গে তাদের নির্মম ও নাছোড়বান্দা সুলভ আচরণের দৃষ্টান্তমূলক কোনো ‘পুরস্কার’ দেওয়া দরকার। একই সঙ্গে শত-হাজার কোটি টাকার উপর বসে থেকেও এত মোটা দাগের অমানবিকতা করার দুঃসাহস তারা কোথায় পায়- সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।