শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোজা ও রমজান: পর্ব-১৫ বিষয়: রমজানের চতুর্থ কর্মসূচী: হৃদয়ে মাহে রমযানের চেতনা লালন করা 

মুফতি মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন

 আপডেট: ১০:০৫, ৮ এপ্রিল ২০২৩

রোজা ও রমজান: পর্ব-১৫ বিষয়: রমজানের চতুর্থ কর্মসূচী: হৃদয়ে মাহে রমযানের চেতনা লালন করা 

রমযান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ নিয়ামত। রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের বার্তা নিয়ে প্রতি বছর হাযির হয় মাহে রমযান। সাহাবা (রাদি.) হৃদয়ে মাহে রমযানের শতভাগ চেতনা লালন করতেন। এজন্য তাদের পক্ষেই সম্ভব ছিল সিয়াম পালন করেও সামরিক অভিযান পরিচালনা করা।


তৃতীয় হিজরীর ১৭ রমযান। বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা। মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে ৩১৩ জন প্রস্তুত হলেন যুদ্ধের জন্যে। ইসলামের বীর যোদ্ধারা সিয়াম পালন করেই অস্ত্রে সজ্জিত এক হাজার দুশমনের বিরুদ্ধে সামনা-সামনি যুদ্ধ শুরু করেন। 
অষ্টম হিজরীর ২০ রমযান। মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে দশ হাজার সাহাবা সিয়াম পালন করেই মদীনা থেকে বের হয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে বিনা রক্তপাতে মহাবিজয় অর্জন করার একমাত্র এটাই প্রথম ঘটনা।


হিজরী প্রথম শতাব্দী। স্পেনের ইহুদীরা সে দেশের জনগণের উপর অত্যাচারের স্টীম রোলার চালাচ্ছিল। তখন রমযান মাসে তারিক বিন যিয়াদ এবং মূসা বিন নুসাইর এর নেতৃত্বে দশ হাজার যোদ্ধা সিয়াম পালন করেই স্পেনে অভিযান পরিচালনা করেন। তারা ৯০ হাজার দুশমনের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতরণ করেন। স্পেনের মাটিতে কুরআনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে সাতশত বছর পর্যন্ত ইসলামের সোনালী যুগ চলছিল। 


৫৮০ হিজরীর রমযান মাস। ঐতিহাসিক রমযান মাস। সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ুবী অভিযান পরিচালনা করেন সিরিয়া এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোতে। তিনি এবং তাঁর বিশাল বাহিনী সিয়াম পালন করেই সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ইসলামের জন্য জীবন বাজি রেখে অনেক যুদ্ধ করে সেখানে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করেছিলেন।


হিজরী সপ্তম শতাব্দী। মঙ্গোলীয়রা এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায়। তারা ৬১৭ হিজরীতে সমরকন্দ, হামাদানসহ বিভিন্ন এলাকাতে আগ্রাসন চালিয়ে বহু মানুষ হত্যা করে। ইতিহাসের বর্ণনা মতে ৬১৭ হিজরীতে তারা সাত লক্ষ মানুষ হত্যা করে। এরপর ৬৫৬ হিজরীতে চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খান বাগদাদ দখল করে ১৮ লক্ষ মানুষ হত্যা করে। তখন বাগদাদের অলি-গলিতে কুকুর ছাড়া আর কোন প্রাণীর দেখা মিলত না। তারা মুসলমানের পাঁচশত বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পাঠাগারে আগুন ধরিয়ে ছিল। আযান বন্ধ করেছিল। মুসলমানকে বাধ্য করেছিল মদ এবং শূকরের মাংস খাওয়ার জন্য। মদ ছিটিয়ে দিয়েছিল মসজিদের ভেতরে। তখন ৬৫৮ হিজরীর ২৫ শে রমযানে সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুব বিশাল সেনা বাহিনী নিয়ে সিয়াম পালন করে মঙ্গোলীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেন। তিনি যুদ্ধে তাদেরকে পরাস্ত করেন। সেখানে উড্ডীন করেন ইসলামের শান্তির পতাকা। 


আমাদের জন্য উচিত হচ্ছে মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবা, তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ী, তারিক বিন যিয়াদ, মূসা বিন নুসাইর, সুলতান সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী, সাইফুদ্দীন কুতুবের মতো হৃদয়ে মাহে রমযানের চেতনাকে লালন করে ইসলামের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়া। মহান আল্লাহর জমিনে কুরআন-সুন্নাহর রাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মাহে রমযানের চেতনাকে হৃদয়ের লালন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।


মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন, 01712961470

মন্তব্য করুন: