শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি

কোথায় যাচ্ছে দেশের ই-কমার্স খাত?

 আপডেট: ১৬:৫৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কোথায় যাচ্ছে দেশের ই-কমার্স খাত?

ফাইল ছবি

ইভ্যালি স্ক্যামের পরে দেশে ই-কমার্স খাত এখনও শক্ত ভিত্তি ফিরে পায়নি। খাত সংশ্লিষ্টদের কেউ বলছেন, ই-কমার্স ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কেউ আবার বলছেন, আরও নিচের দিকে যাচ্ছে। রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও। আসলে কোথায় যাচ্ছে দেশের ই-কমার্স খাত?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খাতে এখনও আস্থার সংকট কাটেনি। তবে ক্রেতাদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। সরকারের নেওয়া কিছু উদ্যোগের সুফল পেতে শুরু করেছে ই-কমার্স। ই-কমার্সমুখী হতে শুরু করেছেন ক্রেতারা।

এছাড়া ই-কমার্স খাতে ডলার সংকট, পণ্য আমদানিতে বাধা (ঋণপত্র খুলতে না পারা), বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, পণ্যের সংকট থাকা, মানুষের চাহিদা কমে যাওয়া, ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়াও ই-কমার্স খাতে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন তারা।  

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইভ্যালি স্ক্যামের পরে সরকারের দেওয়া এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর) যেসব প্রতিষ্ঠান অনুসরণ করছে, তারা ভালো করছে। গ্রাহকের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। অর্ডারের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান ফলো করছে না, বিশেষ করে যারা ফেসবুকনির্ভর (এফ-কমার্স) উদ্যোক্তা, তাদের কারণে ইতিবাচক ফলাফলের হার বাড়ছে না।’

কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ফেসবুক পেজভিত্তিক উদ্যোক্তারা এসওপি মানছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণও করা যাচ্ছে না।’

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সেন্ট্রাল ট্র্যাকিং সিস্টেম, সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। এগুলো চালু করা গেলে এই খাতে আরও স্বচ্ছতা আসবে। গ্রাহকের আস্থা সুদৃঢ় হবে।’

ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘গত ৬ মাস ধরে এই বাজার খারাপের দিকে যাচ্ছে। মেইন মেইন ই-কমার্সের অবস্থা ভালো নয়।’

তিনি মনে করেন, এর পেছনে দুই কারণ রয়েছে। এক হলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আরেক দিকে মানুষের চাহিদাও কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ একেবারে প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কিছু কিনছে না। 

তিনি মোবাইল ফোনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মোবাইলের দাম বেড়েছে অনেক। ফলে চাহিদা কমেছে বাজারে। এই কারণে বিক্রিও কম হচ্ছে। তিনি জানান, গত ৬ মাসে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০ শতাংশ অর্ডার কমে গেছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফাহিম মাশরুর বলেন, অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ কমে গেছে। তারা প্রমোশন, বিপণন কমিয়ে দিয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ কম করছে। পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো ভিসি ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছে না। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

এই উদ্যোক্তার রয়েছে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি টাইগার। তিনি জানালেন, তার প্রতিষ্ঠান ফেসবুক কেন্দ্রিক ই-কমার্স (এফ-কমার্স) প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য ডেলিভারি দিয়ে থাকে। তার প্রতিষ্ঠান এতদিন ডেলিভারি চার্জ বাড়ায়নি। ফলে তাদের ব্যবসায়িক গ্রোথ ভালো ছিল। বাজারের এই অবস্থার মধ্যেও তাদের গ্রোথ ছিল ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। কিন্তু ডেলিভারি টাইগার কর্তৃপক্ষ চার্জ না বাড়িয়ে পারছে না। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি ডেলিভারি চার্জ বাড়াবে বলে জানা গেছে। দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচের সঙ্গে সমন্বয় করতেই এই উদ্যোগ। অনেক প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে ডেলিভারি খরচ বাড়িয়েছে বলে তিনি জানান।  

বাজার অবস্থা জানতে চাইলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পিকাবুর প্রধান নির্বাহী মরিন তালুকদার বলেন, ইভ্যালি স্ক্যামের পরে এই খাতের সামগ্রিক বাজার যেখানে নেমে গিয়েছিল, সেখান থেকে উঠতে শুরু করেছে কিন্তু এখনও কোনও স্ট্যাবল জায়গায় পৌঁছেনি। তিনি বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে বাজার যেখানে ছিল তারচেয়ে ৪০ শতাংশ নিচে বর্তমান বাজারের অবস্থান।

পিকাবু ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটনির্ভর ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে মরিন তালুকদার বলেন, ‘মোবাইলের দাম বর্তমান বাজারে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে বেশি দাম দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ নিতে চাইছে না। বেশিরভাগেরই নজর এখন গ্রে মার্কেটের দিকে। ওই মার্কেট থেকে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত মোবাইলটি কিনতে চাইবে।’ কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রে মার্কেটে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত, দামও কম। তাহলে তারা কেন কিনবে না?’

 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল ২৪

মন্তব্য করুন: