নাকবা: এখনো ফিলিস্তিনিদের রক্তাক্ত বাস্তবতা

ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত (বাংলাদেশ)
প্রিয় বাংলাদেশি ভাই ও বোনেরা,
আজ আমরা স্মরণ করছি "নাকবা"—যা ফিলিস্তিনিদের জীবনে এক অবর্ণনীয় বিপর্যয়ের দিন। এই দিনটি আমাদের কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং একটি চলমান দুঃস্বপ্ন, যা ৭৭ বছর ধরে আমাদের জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে।
নাকবা মানে কী?
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের সহায়তায় গঠিত হয় ইসরায়েল রাষ্ট্র। এর পেছনে ছিল সশস্ত্র জায়নবাদী গোষ্ঠী, যারা লক্ষ্যে পরিণত করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের। বন্দুকের মুখে বাড়ি থেকে তাড়ানো হয় প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার নিরীহ মানুষকে। শুরু হয় নির্বিচার দখল, নিপীড়ন ও নির্মূলের ইতিহাস—যা এখনো চলছে।
৭ অক্টোবরের পর থেকে আজ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজা যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে ৫২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা অসংখ্য দেহ আজও বের হয়নি। প্রতিটি প্রাণের পেছনে ছিল একটি করে গল্প—মা, সন্তান, ভালোবাসা, স্বপ্ন।
শিশুরা এখন শুধু মৃত্যু চিনে
আজকের গাজা শিশুদের কাছে ‘জীবন’ শব্দটা অপরিচিত। তারা জানে কেবল বোমা, রক্ত আর ধ্বংসের গল্প। হাসপাতাল, কবরস্থান, এমনকি স্কুল পর্যন্ত হামলার শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের হাতে তারা নিজেদের দেশেই বন্দী। ‘নিরাপদ এলাকায় চলে যান’ বলে লিফলেট ফেলা হয়, আর ঠিক সেখানেই চালানো হয় বিমান হামলা।
চেকপয়েন্ট, বৈষম্য, অপমান—প্রতিদিনের বাস্তবতা
ফিলিস্তিনিদের চলাচলের স্বাধীনতা নেই। গাড়ির নম্বরপ্লেট দিয়েই চিনিয়ে দেওয়া হয় কে ইসরায়েলি আর কে নয়। চেকপয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আর পাশ দিয়ে ইসরায়েলিরা চলে যায় নির্দ্বিধায়। এই বৈষম্যের চিত্র যেন হিটলারের নাৎসি জার্মানির ছায়া।
জমি, পানি, জীবনের উপর দখলদারি
ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জলাধার নিয়ন্ত্রণ করে। নিজেদের জমিতে তারা নিজেরাই পানি কিনে খায় বেশি দামে। বসতি গঠনের নামে প্রতিদিন নতুন করে কেউ না কেউ ঘরছাড়া হয়। সেনাবাহিনী আসতে পারে যেকোনো সময়, চুপচাপ বাড়ি ভেঙে দিতে—প্রতিবাদ করলে গুলিই একমাত্র উত্তর।
আজও চলছে ‘নাকবা’
এই নাকবা শেষ হয়নি। গাজা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেমে প্রতিটি শিশু এই দুঃস্বপ্নে বাঁচে। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই দখল, দমন আর অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই।
বাংলাদেশের কাছে আমাদের আশা
আমরা জানি, বাংলাদেশের মানুষ সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন আমাদের জন্য গভীর প্রেরণা। ইসরায়েল আমাদের শরীর ভেঙে দিতে পারে, কিন্তু মনোবল কখনো ভাঙতে পারবে না।
আজ ‘নাকবা দিবসে’ আপনাদের কাছে আহ্বান—আমাদের সঙ্গে এই বেদনার স্মরণ করুন। ফিলিস্তিনের সংগ্রাম শুধু আমাদের নয়, এটি বৈশ্বিক ন্যায়বিচারের লড়াই।
আমাদের পাশে থাকুন। যেন বিশ্ব আরেকটি ফিলিস্তিন দেখতে না পায়।