নিয়ন্ত্রণহীন সবজি ও মুরগির বাজার, বিপাকে ক্রেতারা

ঈদের পর কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও দেশের বাজারে ফের বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে সবজি ও মুরগির বাজারে আবারও ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। মৌসুমি সবজির ঘাটতি, টোল চাঁদাবাজি এবং সরবরাহ সংকটকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা। এতে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। সবজির বাজারে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম রমজান ও ঈদের সময় সবজির দাম সহনীয় থাকলেও এখন প্রতিদিনই অল্প অল্প করে বাড়ছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। পুরান ঢাকার নয়াবাজার, শ্যামবাজার ও রায় সাহেব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজির দাম এখন ৭০ টাকার ওপরে। পছন্দসই সস্তা সবজি হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া আর নেই বললেই চলে।
বাজারদর অনুযায়ী আজকের (শুক্রবার) সবজির দাম:
বেগুন: ৭০–৯০ টাকা
চিচিঙ্গা: ৬০–৭০ টাকা
করলা: ৬৫–৮০ টাকা
বরবটি/কচুর লতি: ৭০ টাকা
কাঁকরোল: ৯০–১০০ টাকা
ঢেঁড়স: ৬০–৭০ টাকা
ঝিঙে: ৭০–৮০ টাকা
পেঁপে: ৭০ টাকা
গাজর: ৪০ টাকা
টমেটো: ৩০–৪০ টাকা
শসা: ৫০–৬৫ টাকা
পটোল: ৫০–৬০ টাকা
শজনে ডাটা: ১২০–১৪০ টাকা
প্রতিটি চালকুমড়া ও লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪০–৬০ টাকায়।
শ্যামবাজারের বিক্রেতা আবুল মাল জানান, “শীতকালীন সবজি প্রায় শেষ। গ্রীষ্মকালীন সবজি এখনও পুরোপুরি বাজারে আসেনি। তার ওপর ট্রলারঘাটে চাঁদাবাজি বেড়েছে, ফলে পরিবহন খরচও বাড়ছে।”
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় এবং পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়েছে।
বর্তমানে বাজারে মুরগির দাম:
ব্রয়লার: ১৮০–১৯০ টাকা/কেজি
সোনালি মুরগি: ২৮০–৩০০ টাকা/কেজি
দেশি মুরগি: ৬৫০ টাকা/কেজি
সাদা লেয়ার: ২৮০ টাকা/কেজি
লাল লেয়ার: ৩৩০ টাকা/কেজি
হাঁস (প্রতি পিস): ৬০০–৭৫০ টাকা
নয়াবাজারের বিক্রেতা আজগর আলী জানান, “গত সপ্তাহে মুরগি বিক্রি করেছি ১৬০–১৬৫ টাকায়। কিন্তু এখন পাইকারি দামই বেড়ে গেছে ১০ টাকা করে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম, তাই খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়াতে হয়েছে।”
গরু-মহিষ-মাছের দাম স্থিতিশীল
মাংস ও মাছের বাজারে আপাতত বড় কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি।
মাছের বাজারে দাম কিছুটা স্থিতিশীল:
রুই: ৩০০–৪০০ টাকা
কাতল: ৩৫০–৪৫০ টাকা
কই (চাষ): ২০০–২৫০ টাকা
শিং (চাষ): ৫৫০ টাকা
মাগুর (চাষ): ৫০০ টাকা
পাঙাশ (চাষ): ১৮০–২৩০ টাকা
তেলাপিয়া: ১৫০–২০০ টাকা
কোরাল: ৭৫০ টাকা
আলু ও মসলা সামগ্রীর দাম
আলুর দাম এখনও স্থিতিশীল রয়েছে; কেজি প্রতি ২০–২৫ টাকা। আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা/কেজি, আমদানি করা রসুন ১৮০–২২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০–১০০ টাকা কেজি।
বাজারে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা মৌসুমি পরিবর্তন ও সরবরাহ সংকটের কথা বললেও ক্রেতাদের অভিযোগ, “ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন।” তাদের দাবি, রোজার সময় যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ছিল, তেমন ব্যবস্থা যদি নিয়মিত নেওয়া হতো, তাহলে সাধারণ মানুষ এতটা ভোগান্তিতে পড়ত না।