"শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে": জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
জাতীয় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর পল্টনে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের বিষয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ইসলামে শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক শত্রুতার নয়, বরং ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠা উচিত। শ্রমিক তাদের ন্যায্য অধিকার না পেলে শিল্প কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। শ্রমিকদের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত না হলে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডা. শফিক আরও বলেন, কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের মাঝে সংকট সৃষ্টি করছে এবং উভয় পক্ষের ক্ষতি সাধন করছে। কেউ কেউ অধিক মুনাফা করতে গিয়ে শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্টে ফেলছে। আবার শ্রমিকরাও ক্ষুব্ধ হয়ে কখনো কখনো কর্মস্থলে ক্ষয়ক্ষতি করছে, যা কারও জন্যই লাভজনক নয়। তিনি শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার সমাজ গঠনের আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, শ্রমিকরা তাদের ঘাম ঝরিয়ে যে আয় করে তা হালাল। তাদের শ্রমের মর্যাদা দেওয়া ইসলামি নির্দেশনা। তিনি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং বলেন, যারা শ্রমিকদের অবমূল্যায়ন করে, তারা প্রকৃত উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারাও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, বছরের ৩৬৪ দিন শ্রমিকদের অধিকার বঞ্চিত করা হয়। যদি তাদের ন্যায্য মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হতো, তবে বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। তিনি ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের পক্ষে জোর দেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন নতুন ধারা সৃষ্টি করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ৬০-এর দশকে পশ্চিমা সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির ছত্রছায়ায় মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্বকে উসকে দেওয়া হতো। কিন্তু শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন তার শুরু থেকেই এই মতবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং বলে – পৃথিবীর ইতিহাস শ্রেণি সংগ্রামের নয়, বরং সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস।
সভাপতির বক্তব্যে আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, ইসলামের শ্রমনীতি অনুসরণ করলে শ্রমিকদের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। তিনি শ্রমিকদের জন্য ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ নিশ্চিত করতে ইসলামি নীতির বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ডা. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, হারুনুর রশিদ খান, ইঞ্জি. গোলাম মোস্তফা, লস্কর মো. তসলিম প্রমুখ।
এই সমাবেশে বক্তারা ইসলামি আদর্শে শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের মাধ্যমে টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।