বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, বৈশাখ ১৮ ১৪৩২, ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

রাখাইনে সংঘাতে নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় চাইছে

 প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

রাখাইনে সংঘাতে নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় চাইছে

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট আবারও নতুন মাত্রা পেয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর সম্প্রতি বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে নতুন করে পালিয়ে আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে। বর্তমানে কক্সবাজারে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট মানবিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করেছে। সীমিত ভূখণ্ড, সম্পদের ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাবে এই সংকট আরও জটিল হচ্ছে।

রাখাইনে জাতিসংঘের মানবিক করিডর স্থাপন নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সঙ্গে কোনো চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি এবং বাংলাদেশ শুধুমাত্র লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে। তিনি জানান, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে তীব্র মানবিক সংকট চলছে। দুর্যোগকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার সাম্প্রতিক উদাহরণ ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে মিয়ানমারকে সহায়তা প্রদান করা।’
প্রেস সচিব সতর্ক করে বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে এ ধরনের মানবিক সংকট দীর্ঘ হলে রাখাইন থেকে আরও মানুষের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমরা সামাল দিতে পারব না। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিশ্বাস করে যে জাতিসংঘ-সমর্থিত মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল করতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। তবে এই বক্তব্যের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক দলগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এতে দেশের নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে।

সরকারি শরণার্থী কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়বে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘিত হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে তারা বলেছে, সংকটের মূল দায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে এই সংকট সামাল দিতে গিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবিক সহানুভূতির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা কূটনৈতিক ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজার অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মসংস্থান, খাদ্য সংকট ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে।

ক্যাম্পগুলোতে চরমপন্থী সংগঠনের অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ছে, যা দেশের নিরাপত্তাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত করতে পারে এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে যেতে পারে, যার প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ করে জাতিসংঘ, আসিয়ান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে সক্রিয়ভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।