বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, বৈশাখ ১৮ ১৪৩২, ০৩ জ্বিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভারতে অনলাইনে বাড়ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান ও কনটেন্ট

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৯:০৫, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ভারতে অনলাইনে বাড়ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান ও কনটেন্ট

কাশ্মীরে হামলার পর ভারতে অনলাইনে ছড়াচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান ও কনটেন্ট, উসকে দেওয়া হচ্ছে ঘৃণা ও সহিংসতা।

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলার পর ভারতে ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে মুসলিমবিদ্বেষী নানা গান ও কনটেন্ট। পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউটিউবে প্রকাশিত হয় একটি গান, যার শিরোনাম ‘পেহলে ধরম পুছা’। এতে ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২৩ এপ্রিল হামলায় নিহত হন ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় মুসলিম ঘোড়াচালক। হামলার পরপরই ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য মাধ্যমে বিদ্বেষ ছড়ানো গানগুলো ছড়িয়ে পড়ে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ২০টির বেশি গানে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ, হুমকি ও ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে।

এসব গানে মুসলিমদের ‘বিশ্বাসঘাতক’, ‘সাপ’ বা ‘দেশের শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। কিছু গানে পাকিস্তানকে পারমাণবিক হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। একাধিক গানে পেহেলগামের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে।

ভিডিওগুলোর অনেকগুলোতেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে হামলার সময়কার দৃশ্য বানানো হয়েছে। এই কনটেন্টগুলো হিন্দুদের মধ্যে মুসলিমদের প্রতি ভয়, ঘৃণা ও প্রতিশোধের মানসিকতা গড়ে তুলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

হামলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ডে মুসলিমদের বাড়িতে হামলা, মারধর ও উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কিছু চিকিৎসাকেন্দ্রে মুসলিম রোগীদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হিন্দু চিকিৎসকেরা।

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের আগ্রায় এক মুসলিম ব্যক্তি উগ্র হিন্দুত্ববাদীর গুলিতে নিহত হন, যিনি দাবি করেন—এই হত্যা পেহেলগাম হামলার প্রতিশোধ।

আল জাজিরা জানিয়েছে, ‘জাগো হিন্দু জাগো’ শিরোনামের একটি গান ইউটিউবে ১ লাখ ২৮ হাজারবার দেখা হয়েছে। এতে মুসলিমদের দেশি ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করতে বলা হয় এবং AI-চিত্র ব্যবহার করে হামলার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে হামলা–সংশ্লিষ্ট পোস্টগুলোর ভাষাও একই ধরনের। সেগুলোতে হামলাকে হিন্দু ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের ওপর আঘাত হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে এবং মুসলমানদের হুমকি বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেইট’-এর নির্বাহী পরিচালক রাকিব হামিদ নায়েক বলেন, “এই হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক প্রচার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব কনটেন্ট পরিকল্পিতভাবে আবেগকে উসকে দিচ্ছে এবং মুসলিমবিদ্বেষকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

এছাড়া, অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর) জানিয়েছে, কেবল ২২ এপ্রিলের পর থেকেই ভারতজুড়ে মুসলিমদের লক্ষ্য করে ঘৃণা, হুমকি ও সহিংসতার অন্তত ২১টি ঘটনা ঘটেছে। এর শিকার হচ্ছেন কাশ্মীরি নারী ও শিক্ষার্থীরাও।