অবশেষে সেই খনিজ চুক্তিতে সই করল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইন

কয়েক মাস ধরে উত্তেজনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের মধ্যে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের যৌথ ব্যবহার নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেইনের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে একটি পুনর্গঠন তহবিল প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছে দেশ দুটি।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এটি ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন। মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য এই চুক্তি কিইভের জন্য অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।
বিবিসি লিখেছে, ইউক্রেইন গ্রাফাইট, টাইটেনিয়াম ও লিথিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ খনিজের বিশাল মজুদ রয়েছে বলে মনে করা হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামরিক কাজে এবং শিল্প অবকাঠামোর জন্য এসব খনিজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বৈশ্বিক বিরল খনিজের ৯০ শতাংশের বর্তমান উৎস চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে এই চুক্তি হল।
মার্কিন অর্থ দপ্তরের বুধবারের বিবৃতি অনুযায়ী, নবগঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেইন পুনর্গঠন তহবিলের মাধ্যমে ‘বিপুল আর্থিক ও যুদ্ধসামগ্রী সহায়তার’ স্বীকৃতি মিলেছে। ২০২২ সালে ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে কিইভকে ওই সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এই চুক্তি ইউক্রেইনের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
বিবিসি লিখেছে, চুক্তি ঘোষণার ভাষায় ইউক্রেইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে একাত্মতা প্রকাশ পেয়েছে তা ট্রাম্প প্রশাসনের সাধারণ রীতিকে ছাড়িয়েছে।
এতে ‘রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনে’ কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, “রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রে যারা আর্থিক বা সরবরাহগত সহায়তা করেছে, সেই রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেইনের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া থেকে সুবিধা নিতে দেওয়া হবে না।”
এই চুক্তির বিষয়ে ক্রেমলিন এখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ওয়াশিংটনে বুধবার হওয়া এই চুক্তিতে সই করতে গেছেন ইউক্রেইনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া স্ভিরিদেঙ্কো। তিনি এক্স পোস্টে বলেছেন, “নতুন এই তহবিল আমাদের দেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।”
চুক্তির শর্ত তুলে ধরে স্ভিরিদেঙ্কো বলেন, খনিজ, তেল ও গ্যাস খাতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে, যদিও ইউক্রেইনের সম্পদের মালিকানা অক্ষুণ্ন থাকবে। অংশীদারত্বের হিস্যা সমতার ভিত্তিতে আধাআধি ভাগ হবে, যা কিইভের আইন প্রণেতাদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।
তিনি বলেন, চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র কিইভকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ নতুন সহায়তা দেবে।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কিইভকে ভবিষ্যতে যে কোনো সুরক্ষা গ্যারান্টি দেওয়ার পূর্বশর্ত হিসাবে বারবার এই চুক্তির জন্য চাপ দিয়েছেন।
চুক্তি অনুযায়ী কিইভকে নতুন করে ওয়াশিংটন সহায়তা দেবে জানিয়ে ইউক্রেইনের উপ-প্রধানমন্ত্রী স্ভিরিদেঙ্কো বলেন, উদাহরণস্বরুপ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চুক্তির আওতায় কিইভকে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় যে কোনো নিরাপত্তা দেওয়ার কথা একাধিকবার বলেছেন।
ভবিষ্যতের মার্কিন নিরাপত্তা সহায়তার বিনিময়ে ইউক্রেইন-ওয়াশিংটনকে তার কিছু প্রাকৃতিক সম্পদে প্রবেশাধিকার দেবে বলে খসড়ায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু যুদ্ধে মার্কিন সহায়তার যে বিনিময় দাবি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, তার চাইতে অনেক কম পরিমাণের কথা চুক্তিতে বলা হয়েছে।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের কাছ থেকে কিছু ছাড় আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিইভ শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানোর পর চুক্তিটি হতে বিলম্ব ঘটল।
সপ্তাহান্তে চূড়ান্ত হওয়া কিছু শর্ত নিয়ে ইউক্রেইন পুনরায় আলোচনার চেষ্টা করায় বুধবার বিকালে সেই উদ্যোগের সমালোচনা করেন আলোচনার ওয়াকিবহাল এক মার্কিন সূত্র।
ওই সূত্র বলছে, তহবিল পরিচালনা পদ্ধতি, স্বচ্ছতা সংক্রান্ত বিষয় এবং তহবিলের সব অর্থ শনাক্তের ব্যবস্থা নিয়ে মতপার্থক্য ছিল।
দুই দেশের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে কারিগরি নথিতে সই করেন।
বিবিসি লিখেছে, চুক্তিটি গেল ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্পের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তা ভেস্তে যায়। তিনি বলেছিলেন, জেলেনস্কি ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া’ খেলছেন।
ভ্যাটিকানের সেইন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকায় বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: রয়টার্স
গত শনিবার পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানের ফাঁকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মুখোমুখি বৈঠকের পর শেষমেশ চুক্তিটি আলোর মুখ দেখল। এরমধ্যে ইউক্রেইনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বুধবার সন্ধ্যায় নিউজনেশন নেটওয়ার্কে ফোন করে ট্রাম্প বলেছিলেন, চুক্তিটি সম্পাদন করতে জেলেনস্কিকে ভ্যাটিকানে চাপ দিয়েছিলেন তিনি।
“আমি তাকে বলছিলাম যে আপনি যদি এমন একটি চুক্তিতে সই করেন, তা অত্যন্ত ভালো হবে। কারণ রাশিয়া আয়তনে ও শক্তিতে অনেক বড়। তারা অবিরাম সামনে এগোচ্ছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেইনকে দেওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা ফিরে পাওয়া যাবে এবং তার পরিমাণ তত্ত্বীয় ধারণার চাইতে অনেক বেশি।
“তাই আমি তাদের কাছে গিয়ে বললাম, ‘শোনো, আমাদের বিরল খনিজ দরকার।’ তাদের কাছে অসাধারণ বিরল খনিজ আছে, মানে নির্দিষ্ট কিছু খনিজ ও পদার্থ।”
“তাদের কাছে এমন অনেক জিনিস আছে- যা অনেক স্থানেই নেই। এটি তাদের একটি বড় সম্পদ।”