লেবানন সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হিজবুল্লাহ, সমর্থকদের ধৈর্যের আহ্বান

লেবাননের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বুধবার এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে, সরকার পুরো দেশে অস্ত্র ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব কেবল রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ‘গুরুতর পাপ’। তারা দাবি করেছে, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের ফসল এবং এটি সরাসরি ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করে।
বুধবার (৬ আগস্ট) এ খবর প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়াহ।
লেবাননের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার দেশটির সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ অস্ত্র ব্যবস্থাপনা শুধু ছয়টি সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য হলো—ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর অস্ত্র ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ।
এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে লেবাননে তৈরি হয়েছে চরম রাজনৈতিক উত্তেজনা। হিজবুল্লাহর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই সরকারকে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তারা আশঙ্কা করছে, যদি এই পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে ইসরাইল লেবাননে আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে পারে।
হিজবুল্লাহ এক লিখিত বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালামের সরকার লেবাননকে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী অস্ত্র থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে গুরুতর পাপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করে।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে শিয়া মন্ত্রীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই ওয়াকআউট করেন। হিজবুল্লাহ বলছে, এটি ‘প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের প্রত্যাখ্যানের’ প্রতীক।
তবে হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা একটি জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত এবং দলটির সমর্থকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকই ছিল প্রথমবারের মতো যখন লেবাননের মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে হিজবুল্লাহর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করে। অতীতে, বিশেষ করে ইসরাইলের সঙ্গে বিধ্বংসী সংঘর্ষের সময় হিজবুল্লাহর ক্ষমতার উচ্চতায়, এমন আলোচনা কল্পনাও করা যেত না।
জানা গেছে, মন্ত্রিসভা বৃহস্পতিবার আবার বৈঠকে বসবে। সেখানে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলবে। এই প্রস্তাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ রজ্জি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে লেখেন, সরকার দেশের সব অস্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনতে বছরের শেষ নাগাদ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘লেবাননের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশে আমাদের বার্তা স্পষ্ট: এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত, এতে কোনো প্রত্যাবর্তনের সুযোগ নেই।’