বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২২ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৭

মতামত

`জুলাই ঘোষণায় ইতিহাসের বিকৃতি রয়েছে’ — বার্গম্যানের মন্তব্য

 প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ৫ আগস্ট ২০২৫

`জুলাই ঘোষণায় ইতিহাসের বিকৃতি রয়েছে’ — বার্গম্যানের মন্তব্য

ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।

জুলাই ঘোষণাপত্রে সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরার ধরনকে একপাক্ষিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি এ মন্তব্য করেন।

স্ট্যাটাসে তিনি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন, ঘোষণার কোন কোন অংশ তার কাছে রাজনৈতিক ও পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে হয়েছে। ঘোষণার সূচনায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বয়ানে আওয়ামী লীগ শাসনামলের ইতিহাসচর্চা নিয়ে যে বিতর্ক ছিল, সেটিকে আরও তীব্রভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

বার্গম্যানের মতে, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের সময়কালের ইতিহাস ঘোষণায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ওই সময়কে কেবল একদলীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে চিত্রায়িত করে যুদ্ধ-পরবর্তী রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য বাস্তবতা উপেক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়া, ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার দায় সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়ার ওপর চাপানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তখন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছিল, তবে সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগের উদ্দেশ্য হতে পারে নতুন সংবিধানের জন্য জনমত তৈরি করা।”

ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের ১৬ সদস্যকে হত্যার প্রসঙ্গ অনুল্লেখ থাকার বিষয়েও আপত্তি জানান তিনি। বার্গম্যান বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের পরই বাংলাদেশ বহু বছরের জন্য সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়। অথচ এমন একটি ঘটনাকে ঘোষণায় উপেক্ষা করা হয়েছে।”

ঘোষণার এক অংশে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ১/১১-এর চক্রান্তের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে—এই বক্তব্যও চ্যালেঞ্জ করেন বার্গম্যান। তিনি বলেন, “যদিও কিছু আসনে অনিয়মের অভিযোগ ছিল, তবে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনকে সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।”

বার্গম্যান স্বীকার করেন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে অনেক অভিযোগের সত্যতা আছে। তবে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ শুরুতে অগণতান্ত্রিক ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বৈরশাসনের দিকে গেছে। কিন্তু জুলাই ঘোষণায় দলটির শাসনামলকে শুধুই স্বৈরাচার, মানবতাবিরোধী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার অভিযানে ব্যস্ত ছিল বলে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা একপাক্ষিক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

তিনি বলেন, “যেমন অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারী শিক্ষা, জলবায়ু সচেতনতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মতো ইতিবাচক দিকগুলো সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।”

তবে ঘোষণার কিছু প্রশংসাযোগ্য দিকও তুলে ধরেন বার্গম্যান। তার মতে, “ঘোষণায় মুক্তিযুদ্ধকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। একই সঙ্গে, আন্দোলনে আহত-নিহতের সংখ্যা নিয়ে অতিরঞ্জনের পরিবর্তে যুক্তিসংগত সংখ্যা ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে।”

এছাড়া, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “নিজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা থাকা সত্ত্বেও ড. ইউনূস এতে সম্মতি দিয়েছেন।” তবে ঘোষণাপত্রটি আরও সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত ছিল বলেও মত দেন তিনি।