হাসিনাকে ফেরানোর অনুরোধে দিল্লির জবাব মেলেনি:পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করতে ভারত সরকারের কাছে পাঠানো অনুরোধপত্রের এখনও কোনো জবাব পায়নি বাংলাদেশ সরকার।
সোমবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “আমরা তো এটা কখনোই গোপন করি নাই, আমরা চেয়েছি যে তাকে ফেরত দেওয়া হোক, যাতে বিচারের সম্মুখীন করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত থেকে এখনো কোনো পজিটিভ রেসপন্স আমাদের কাছে আসেনি। আমরা অপেক্ষায় আছি। তবে বিচার প্রক্রিয়া থেমে নেই। কেউ আসুক বা না আসুক, বিচারের কাজ চলবে।”
গত বছরের ৫ আগস্ট তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়ে ভারত পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। তার দলের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলেও অধিকাংশ এখনও আত্মগোপনে।
এই পরিস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে একটি মামলায় বিচার শুরু করেছে ট্রাইব্যুনাল। গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠিয়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, দিল্লি তাকে ফেরত না পাঠানোর সিদ্ধান্তেই অটল এবং চিঠির জবাব দিতে সময় নিতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা— এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এই মুহূর্তে সেরকম কোনো প্রয়োজন দেখছি না। তবে ভবিষ্যতে সরকার যদি প্রয়োজন মনে করে, তখন সেই পথে যাওয়া হতে পারে।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যর্পণ নিয়ে দেরির পাশাপাশি সীমান্তে ভারতের ‘পুশ ইন’ নীতিও উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশি পরিচয়ে ভারত ৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১,২২২ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “পুশ ইনের কোনো স্বীকৃত পদ্ধতি নেই। যদি কেউ অবৈধভাবে ভারতে থাকে, তাহলে তারা আমাদের জানাবে, আমরা যাচাই করে নিশ্চিত হলে ফেরত নেব। কিন্তু পুশ ইন সেই প্রক্রিয়ার ব্যত্যয়।”
বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলেছি— যাদের তালিকা তারা দিয়েছে, আমরা সেটা যাচাই করে তাদের ফেরত নিয়েছি। কাজেই তাদেরও সেই প্রক্রিয়া মেনে চলা উচিত। কিন্তু তারা পুশ ইন চালিয়ে যাচ্ছে, এটা দুঃখজনক।”
ভারতের এমন আচরণে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “যুদ্ধ করব না নিশ্চয়ই। আমাদের পথ হচ্ছে কূটনৈতিক। আমরা সেটাই অনুসরণ করছি। যদিও এখনো সফল হইনি, আশা করি কোনো একসময় সফল হবো।”