বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২২ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

দিল্লি সকালেও আঁচ করতে পারেনি, দিনের শেষে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৮:১২, ৫ আগস্ট ২০২৫

দিল্লি সকালেও আঁচ করতে পারেনি, দিনের শেষে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে গণআন্দোলনের পর শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে চেপে ভারতে পলায়ন করেন।

গত বছর ৫ আগস্ট বাংলাদেশের বৃহত্তম ছাত্র–জনতা আন্দোলনের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই দিনই তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তবে কীভাবে, কী পরিস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে আজ বিবিসি বাংলার সাংবাদিক শুভজ্যোতি ঘোষ বিস্তারিত লিখেছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সোমবার, ভারতের পার্লামেন্টের বর্ষা অধিবেশনের শেষ সপ্তাহের প্রথম দিন। ওইদিন দেশের শীর্ষ নেতাদের দৌড়াধৌড়ির মাঝেই গোয়েন্দা সংক্রান্ত আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কারণ, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে সেই সময় ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি নিয়ে লাখ লাখ বিক্ষোভকারীরা রাজধানী অবরুদ্ধ করতে যাচ্ছিলেন।

অভূতপূর্ব জনজাগরণ ও সরকার পতনের ঝুঁকি সামনে রেখে ভারতের এই শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। সেনাপ্রধানদের মধ্যে চলছিল পরস্পরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ। যদিও বাংলাদেশে সেনা পাঠানোর কোনো সম্ভাবনা ছিল না, তবু ভারত প্রত্যেক রকম সহায়তার জন্য প্রস্তুত ছিল।

৫ আগস্ট সকালেও দিল্লি পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র বুঝতে পারেনি। এমনকি সেই দিন দুপুরে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বললেও আশ্রয় নেয়ার সম্ভাবনা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

সেদিন দুপুরে ঢাকা থেকে দিল্লিতে পরপর দুটি ফোন আসে। প্রথমে শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা। এরপর বাংলাদেশের বিমান বাহিনী ভারতের এয়ারফোর্স কমান্ডকে অনুরোধ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান ভারতীয় কোনো ঘাঁটিতে অবতরণের অনুমতি দেয়ার জন্য। ভারত তা অবিলম্বে মঞ্জুর করে।

ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হলেও একটি শর্ত ছিল—তিনি বাংলাদেশের কোনো সামরিক বিমান বা হেলিকপ্টারেই ভারতীয় মাটিতে আসবেন। ভারতের সেনাবাহিনী এ সিদ্ধান্ত নিয়ে চেয়েছিল যেন ‘আমরা উদ্ধার করি’ এই তকমা এড়ানো যায়।

পরবর্তীতে ঢাকা থেকে একটি সিজে-১৩০ সামরিক পরিবহন বিমান দিল্লির কাছে হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে। শেখ হাসিনা ও তাঁর সঙ্গীরা সেখানে নেমে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা হন।

তবে ভারতের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমদিকে ছিল ব্যাপক চুপচাপ। বিরোধী দলগুলোও সরকারের অনুরোধে পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয় নি। পরবর্তীতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে বিরোধীদলীয় নেতারা ভারতের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি কৌশল সম্পর্কে জানতে চান।

শেখ হাসিনার ভারতে সাময়িক অবস্থানের কথা বলা হলেও, বিকেলের পর দিল্লিতে জোর আলোচনা শুরু হয় তিনি কোথায় যাবেন। যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইডেন সহ কয়েকটি দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও যুক্তরাজ্য সরকার ওই সময় ভারতকে জানিয়ে দেয়, তারা শেখ হাসিনাকে তৎক্ষণাৎ দেশে আসতে দিতে পারবে না।

শেখ হাসিনার ভারতীয় অবস্থান ও নিরাপত্তার দায়িত্বভার অজিত ডোভালের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিনি নিজের অঙ্গীকার জানিয়েছেন যেন নিরাপত্তার সব আয়োজন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

এক সময়ে শেখ হাসিনা যখন ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত দিল্লিতে ছিলেন, তখন স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব ছিল কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জির। এবার সেই দায়িত্ব নেন অজিত ডোভাল। শেখ হাসিনার ভারতীয় অবস্থান এখন পর্যন্ত সুরক্ষিত এবং তার সঙ্গে নিয়মিত ‘ডিব্রিফিং সেশন’ হচ্ছে।

৫ আগস্টের সেই ঘটনা ও পরবর্তী কূটনৈতিক জটিলতা প্রমাণ করে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক ও দুই দেশের কূটনীতি কতটা সংবেদনশীল। আজও সেই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় রাজনৈতিক সংকট ও আন্তঃদেশীয় দ্বন্দ্বের জটিলতাকে।