বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২৩ ১৪৩২, ১২ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

আমরা ব্যর্থ, তরুণরা বিজয় এনেছে—আসিফ নজরুল

 প্রকাশিত: ২২:০৫, ৬ আগস্ট ২০২৫

আমরা ব্যর্থ, তরুণরা বিজয় এনেছে—আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল (ফাইল ফটো)

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, "আমরা বৃদ্ধরা ব্যর্থ হয়েছি, তরুণরা আমাদের জন্য একটি বিজয় এনে দিয়েছে। এটা কত বড় বীরত্ব—তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।"

বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর বসুন্ধরায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (NSU) ক্যাম্পাসে ‘জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এনএসইউ’র সেন্টার ফর পিস স্টাডিস এবং জার্মানির আর্নল্ড বের্গস্ট্রেসার ইনস্টিটিউট (ABI) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

আসিফ নজরুল বলেন, তরুণরা অভ্যুত্থানের সময় ‘মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও’ অকাতরে প্রাণ উৎসর্গ করে ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তিনি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, “আমি ভাবতাম, মানুষের এত সাহস কীভাবে হয়? মৃত্যুকে জেনেও কেউ এগিয়ে যায় কীভাবে? এর উত্তর আমি পেয়েছি জুলাই অভ্যুত্থানে। তরুণ প্রজন্ম ফ্যাসিস্ট শাসককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।”

তিনি শহীদ আবু সাঈদের প্রসঙ্গে বলেন, "রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ ‘মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও’ পুলিশের বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। আমাদের শহীদুল আলম ভাই আছেন এখানে। তিনি ফুটেজে দেখিয়েছেন, আবু সাঈদ জানতো সে মারা যাবে। সে প্রথম থেকেই আন্দোলনের অংশ ছিল এবং মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিল। এটা ছিল একদম পরিকল্পিত আত্মদান।”

তিনি আরও বলেন, "আবু সাঈদ মানুষকে প্রেরণা দিতেই বুক পেতে মৃত্যুকে বরণ করেছে। এই ভিডিও দেখে কিছুক্ষণ পর শহীদ ওয়াসিমরা শহীদ হয়। এরপর বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররা প্রতিদিন রাতে এই নির্যাতনের ফুটেজ দেখেও আন্দোলনে যেতো।”

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ‘সর্বনাশ’ করেছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “একজন ছাত্র ফোর পয়েন্ট সেভেন পায়, আরেকজন ফোর পয়েন্ট থ্রি। আমি বললাম, তুমি পাস করলা কিভাবে—বোঝা যাচ্ছে না। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আমিতো এভাবেই পড়ে এসেছি। মানে মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট সে এভাবেই পাস করেছে।”

সরকারের সমালোচনা করে আসিফ নজরুল বলেন, “একটা মহিলা, নিজের জেনারেশনের সবাইকে বিদেশে পড়িয়েছে, বিয়ে দিয়েছে, সেটেল করিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেন পড়াশোনা না করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করেছে। বোর্ড অফিসগুলোকে নির্দেশ দিত—সবাইকে পাস করাতে হবে। ভালো খাতা দেখলে চাকরি খেয়ে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাবঞ্চিত করা হয়েছে। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।”

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন এনএসইউ উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—এনএসইউ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সদস্য এ কে কাশেম, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বের্ন্ড স্প্যানিয়ার, শহীদ তানভীরের মা দিলকুশ জামান, সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের চেয়ারম্যান এম জাসিম উদ্দিন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এবং এনডিএম নেতা ববি হাজ্জাজ।