বুধবার ০৬ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২২ ১৪৩২, ১১ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে কি প্রায়শ্চিত্ত করতে চায় ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য?

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৮:০৮, ৫ আগস্ট ২০২৫

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে কি প্রায়শ্চিত্ত করতে চায় ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য?

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিন স্বীকৃতি: ঔপনিবেশিক অতীতের ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ বা বাস্তব পরিবর্তনের প্রত্যাশা?

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দুই-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক বৈঠকে গত ২৮ জুলাই মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বক্তব্য রাখেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, জি-৭’র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স আগামী সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে। এতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া রাষ্ট্রের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫০। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই স্বীকৃতির বাস্তব অর্থ কতটুকু এবং ফিলিস্তিনের জন্য এটি কতটা কার্যকর হবে?

আগে ১৪৭টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ৭৭ বছর পরেও ফিলিস্তিন পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি। ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন ও গাজা উপত্যকায় চলমান অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ আজও ভীষণ দুর্ভোগে রয়েছেন। খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে গাজায় অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের এই স্বীকৃতি কূটনৈতিক গুরুত্ব বহন করলেও কার্যকর হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে দুই দেশের ঔপনিবেশিক অতীতের কারণে এই স্বীকৃতিকে ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে দেখছে অনেকের মতামত।

ব্রিটিশ ও ফরাসি ঔপনিবেশিক নীতি ও ফিলিস্তিন সংকট

ফিলিস্তিন একসময় ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা আরবদের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাইক্স-পিকো চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের ভাগাভাগি করে নেয়। একই সময়ে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি জাতীয় আবাসভূমি গঠনের কথা ঘোষণা করে (বেলফোর ঘোষণা ১৯১৭), যা ফিলিস্তিনি আরব জনগণের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করে।

১৯২০ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনে ম্যান্ডেট গ্রহণ করে ইহুদিদের জন্য আবাসস্থল তৈরিতে সহযোগিতা শুরু করে। ইহুদিদের ঢল নেমে আসে ফিলিস্তিনে, যা ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ১৯৩৬-১৯৩৯ সালে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জাতিসংঘ ১৯৪৭ সালে ফিলিস্তিনকে দুইভাগে ভাগ করার পরিকল্পনা নেয়, যেখানে ইহুদিদের জন্য ৫৫ শতাংশ এবং আরবদের জন্য ৪৫ শতাংশ জমি বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনি আরবরা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন ছেড়ে যায় এবং ইহুদি নেতারা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। এরপরই প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং লাখ লাখ মানুষ নির্বাসিত হন। পরবর্তী বছরগুলোতেও ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের হামলা ও দখল অব্যাহত রয়েছে।

প্রতীকী স্বীকৃতি থেকে বাস্তব পদক্ষেপের দাবি

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া সিদ্ধান্তকে অনেক বিশ্লেষক প্রতীকী বলেই মনে করেন। তারা বলেন, এই স্বীকৃতি কোনো শর্তসাপেক্ষ নয় এবং দুই দেশের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের দায় থেকে পালানোর প্রয়াস হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিন সংকট শুধুমাত্র ধর্মীয় সংঘাত নয়, বরং এটি দখলদারি ও উপনিবেশবাদী আগ্রাসনের ইতিহাস। ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হলেও ফিলিস্তিনি জাতির ভূমি ও অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।

বিশ্বজনীন সমাজের উচিত এই ভুল স্বীকার করে সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিনিদের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা—যেমন গাজা অবরোধ প্রত্যাহার, মানবিক সাহায্য নিশ্চিতকরণ, ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ