শনিবার ১৬ আগস্ট ২০২৫, ভাদ্র ১ ১৪৩২, ২১ সফর ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রতিনিধিদল প্রকাশ

 আপডেট: ২২:৩৯, ১৫ আগস্ট ২০২৫

গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রতিনিধিদল প্রকাশ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য সমাধান খুঁজতে সারাবিশ্বের দৃষ্টি এখন ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের দিকে। শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য এই আলোচিত বৈঠকের আগে দুই দেশই জোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই নিজেদের বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রতিনিধিদলটি গঠিত হয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি, কৌশলবিদ ও কূটনীতিকদের নিয়ে। অন্যদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে থাকছেন তার ঘনিষ্ঠ ও অভিজ্ঞ উপদেষ্টারা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, হোয়াইট হাউজে বর্তমানে অভিজ্ঞ রাশিয়া বিশেষজ্ঞের অভাব স্পষ্ট।

রাশিয়ার প্রতিনিধিদলে যাঁরা থাকছেন:

সের্গেই লাভরভ (৭৫) – প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সোভিয়েত যুগে কূটনৈতিক জীবন শুরু করে তিনি জাতিসংঘে এক দশক রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি হয়ে উঠেছেন মুখোমুখি ও আক্রমণাত্মক ভাষার একজন কূটনীতিক।

ইউরি উশাকভ (৭৮) – পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ও শান্ত মেজাজের এই অভিজ্ঞ কূটনীতিক ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ছিলেন। পর্দার আড়াল থেকে পুতিনের আন্তর্জাতিক কৌশল নির্ধারণে তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

আন্দ্রেই বেলোউসোভ (৬৬) – অর্থনীতিবিদ থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়া এক ব্যতিক্রমধর্মী পদস্থ কর্মকর্তা। ২০২৪ সালে তিনি সের্গেই শোইগুর স্থলাভিষিক্ত হন। সেনাবাহিনীর দুর্নীতি দমন ও যুদ্ধ-অর্থনীতি সচল রাখার লক্ষ্যে তাকে এই পদে বসানো হয়।

কিরিল দিমিত্রিয়েভ (৫০) – হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডে শিক্ষিত, রাশিয়ার ১০ বিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম তহবিলের পরিচালক। পুতিন পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মার্কিন ব্যবসায়ী মহলে তার সুসম্পর্ক রয়েছে এবং আলাস্কা বৈঠকে তিনি আর্কটিক অঞ্চলে যৌথ অর্থনৈতিক প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে পারেন।

আন্তন সিলুয়ানভ (৬২) – ২০১১ সাল থেকে রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখেও দেশের অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার মূল কারিগর হিসেবে তিনি পরিচিত।

 

মার্কিন প্রতিনিধিদলে যাঁরা থাকছেন:

মার্কো রুবিও (৫৪) – সাবেক ফ্লোরিডা সিনেটর ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। বর্তমানে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। চীন ও রাশিয়া বিষয়ে তার কড়া অবস্থানের জন্য সুপরিচিত।

স্টিভ উইটকফ (৬৮) – একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু। যদিও তার কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, তবুও ইউক্রেন ও গাজা ইস্যুতে তিনি অনানুষ্ঠানিক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রায়ই এককভাবে ক্রেমলিন সফর করেন।

পিট হেগসেথ (৪৫) – সাবেক ফক্স নিউজ উপস্থাপক ও বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সমালোচকদের মতে, তিনি চরম ডানপন্থি খ্রিস্টান মতাদর্শে প্রভাবিত হলেও ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যের কারণে পদে টিকে আছেন। ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের নিরাপত্তাকে আর অগ্রাধিকার দেবে না এবং ইউক্রেন রক্ষার দায়িত্ব মূলত ইউরোপের উপরেই বর্তাবে।

 

এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দুই পক্ষই ভিন্নধর্মী ও অভিজ্ঞ প্রতিনিধিদল নিয়ে উপস্থিত থাকছে। তবে বাস্তব সমাধান কতটা পাওয়া যাবে, তা নিয়ে এখনো সংশয় থেকে যাচ্ছে—বিশেষ করে ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে।