তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরু জানুয়ারিতে, ব্যয় ১২ হাজার কোটি টাকা

ফাইল ছবি
তিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে আগামী জানুয়ারি ২০২৬ থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা এবং এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে ১০ বছর। প্রথম পাঁচ বছরে গুরুত্ব পাবে সেচ সুবিধা, নদীভাঙন রোধ এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ।
এরই মধ্যে চীনা দূতাবাসের প্রতিনিধি দল তিস্তা নদীর মাঠপর্যায়ের জরিপ সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পের খসড়া চীন সরকারের কাছে পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিস্তা নদীকে ঘিরে উত্তরাঞ্চলের দুই কোটির বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকা গড়ে উঠেছে। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে মাছ ধরা—সবকিছুতেই এই নদীর ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবার। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
রিভারাইন পিপল–এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর তিস্তার ভাঙন ও প্লাবনে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলা—নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা—জুড়ে। এই ভাঙনে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রকল্পটি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে সফরে আসেন চীনের ডিরেক্টর অব দ্য পলিটিক্যাল সেকশন জং জিং। তিনি নদী তীরবর্তী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, যার মধ্যে ছিল বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ ও তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ২০১৪ সাল থেকে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবেশী ভারত তিস্তার সব পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষায় কপাট খুলে দেওয়ায় হঠাৎ পানির তোড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়, নদীভাঙনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ক্ষতির মুখে পড়ে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ–এর সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, “১০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আগের আওয়ামী লীগ সরকার তিস্তাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে অববাহিকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে।”