রোববার ০৪ মে ২০২৫, বৈশাখ ২১ ১৪৩২, ০৬ জ্বিলকদ ১৪৪৬

পর্যটন

একজন বাবর আলী হতে আসলে কী লাগে?

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ৩ মে ২০২৫

একজন বাবর আলী হতে আসলে কী লাগে?

বাবর আলী: সাহস, কৌতূহল ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এক জীবনের গল্প

প্রতি বাংলা নববর্ষের মতো ১৪৩২ সনে, দেশের বিভিন্ন খাতে তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে প্রথম আলোর ‘ছুটির দিনে’ ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয়েছে এক অসাধারণ গল্প—এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী বাবর আলীর জীবনকথা।

২০১৪ সালে, সাকা হাফং অভিযানের জন্য একদল বন্ধুর সঙ্গে বের হওয়ার পর হঠাৎই সেই দলে যুক্ত হন একজন নতুন সদস্য—বাবর আলী, যিনি তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছিলেন। ট্রেকিংয়ে কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও কেউ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু অভিযানে বাবর তাদের একান্ত অংশ হয়ে ওঠেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার, এবং সেই স্বপ্ন তাকে একদিন এভারেস্ট, লোৎসে, অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ ছোঁয়ার সাহস জুগিয়েছিল।

বাবরের অ্যাডভেঞ্চারের দুনিয়া সীমাবদ্ধ ছিল না শুধু পর্বতারোহণ পর্যন্ত। রক ক্লাইম্বিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং, সাইক্লিং, সাঁতার, ক্রস-কান্ট্রি হাইকিং—সব ক্ষেত্রেই বাবরের ছিল এক উজ্জ্বল উপস্থিতি। ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী সাইকেলযাত্রা, শ্রীলঙ্কার এ মাথা থেকে অন্য মাথায় হাঁটা, দেশের ৬৪ জেলা ৬৪ দিনে হেঁটে যাওয়া—এই ধরনের সাহসিকতা তার জীবনকে আলোকিত করেছে।

বাবর আলী শুধুমাত্র অ্যাডভেঞ্চারের জন্যই পরিচিত নন, তিনি কর্মক্ষেত্রেও সমান তৎপর। পাহাড়ি শিশুদের শিক্ষা, দুর্গম এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া, পরিবেশ সংরক্ষণ—এসব কর্মকাণ্ডে তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। বেশ কিছুবার তাকে পাহাড়ের পথে পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়িয়ে প্রকৃতির ক্ষত সারানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে।

একজন বাবর আলী হতে হলে, অগাধ সাহস, অফুরন্ত কৌতূহল এবং সবচেয়ে বড় কথা, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকতে হয়—মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি এবং জীবনের প্রতি। বাবর আলী কখনোই বড় কোনো উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাননি, বরং বছরের পর বছর ধরে চলা আত্মচর্চা, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং নিরবচ্ছিন্ন সাধনায় তিনি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছেন।

বাবরের চরিত্রে সরলতা, বিনয় এবং মানবিকতা স্পষ্ট। তিনি নিজের জীবনকে মাটির সঙ্গে সম্পর্কিত করে গড়ে তুলেছেন। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেও কখনো অহংকার তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি পড়ুয়া মানুষ, যিনি ক্লান্তি সত্ত্বেও বই পড়তে ভালোবাসেন এবং লেখালেখির মাধ্যমে তাঁর অভিজ্ঞতা মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।

আজ, তিনি বিশ্বের ১৪টি ৮ হাজার মিটার উচ্চতার শৃঙ্গ জয় করার স্বপ্ন দেখেন, ইতিমধ্যে তিনটি অর্জিত হয়েছে। প্রকৃতির কাছে নিরাশ হওয়া বাবর আলী সম্ভবত কখনোই নয়।