মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২, ১৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

টেকসই শিক্ষা ও সামাজিক ব্যবসা

ওএনপি২৪ নিউজ ডেস্ক

 প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৯ আগস্ট ২০২৫

টেকসই শিক্ষা ও সামাজিক ব্যবসা

শিক্ষায় বিনিয়োগই টেকসই উন্নয়নের সোপান

শিক্ষা মানবসেবা ও উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। দক্ষ ও উৎপাদনশীল জনশক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে এটি সমাজকে এগিয়ে নেয়, সম্পদের বৈষম্য কমায় এবং একটি সমৃদ্ধ ও সুখী সমাজের ভিত্তি স্থাপন করে। অনেক দেশ শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। তবে বৈশ্বিকভাবে শিক্ষা এখন কেবল সেবামূলক খাত নয়, লাভজনক ব্যবসারও বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে—স্কুল, অনলাইন কোর্স, কারিগরি প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা-সম্পর্কিত পণ্য ও সেবা পর্যন্ত।

বাংলাদেশে শিক্ষার বাড়তি চাহিদা মেটাতে বেসরকারি খাতের প্রবেশ উল্লেখযোগ্য। উন্নত অবকাঠামো ও প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন বা মানোন্নয়নের চেয়ে ভর্তি বৃদ্ধি ও আয় বাড়ানোর দিকেই বেশি মনোযোগী। ফলে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে, যা সামাজিক বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা খাতে বেসরকারি ও সরকারি উভয় পক্ষের ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা জরুরি। লাভজনকতার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বকে গুরুত্ব দিলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। ১৯৯২ সালে দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক মানসিকতা জায়গা করে নিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর Creating a World Without Poverty বইয়ে সামাজিক ব্যবসাকে এমন এক ধারার উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা মুনাফা নয়, বরং সামাজিক বা পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে কাজ করে এবং আয়কে পুনর্বিনিয়োগ করে স্বাস্থ্য, আবাসন, শিক্ষা বা পরিবেশের মতো খাতে। এই মডেলে অনুদানের ওপর নির্ভর না করে টেকসইভাবে সামাজিক লক্ষ্য অর্জন করা হয়।

শিক্ষাকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বিবেচনা করলে এর প্রভাব বহুমুখী—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য হ্রাস, উদ্ভাবন বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি। গবেষণা বলছে, শিক্ষায় প্রতিটি ডলার বিনিয়োগে ১০–১৫ ডলারের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি হয়।

এ ছাড়া শিক্ষা স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, অপরাধপ্রবণতা হ্রাস, লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক সম্প্রীতি গঠনে সহায়ক। ইউনেসকোর তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার দ্বিগুণ হলে সংঘাতের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের শিক্ষাবাজেট অনেক কম—কিছু আফ্রিকান দেশের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে শিক্ষায় বড় বিনিয়োগ জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর ফি-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে এন্ডাওমেন্ট ফান্ড গড়ে তুলে, যেমনটি উন্নত দেশগুলোতে প্রচলিত।

এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাবও এসেছে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অর্থ গবেষণা, উদ্ভাবন ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যয় করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা যদি ব্যবসা হয়, তবে সেটি হওয়া উচিত সামাজিক ব্যবসা—যেখানে লাভ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের লক্ষ্যই হবে প্রধান উদ্দেশ্য।