বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২৯ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

খেলা

দল নির্বাচন বিতর্কে ব্যতিক্রম ঢাকা বিভাগ

 প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১২ আগস্ট ২০২৫

দল নির্বাচন বিতর্কে ব্যতিক্রম ঢাকা বিভাগ

রাজশাহী ও বরিশালের দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের মধ্যেও স্বচ্ছ ও পেশাদার প্রক্রিয়ায় দল গঠন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ঢাকা বিভাগ।

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) সুযোগ-সুবিধা এখন আগের তুলনায় অনেক উন্নত। একসময় খেলোয়াড়দের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, মাঠের মান—সবকিছু নিয়েই অভিযোগ ছিল। তখন অনেকেই লিগটিকে গুরুত্ব না দিয়ে “পিকনিক মুডে” খেলতেন। এখন বিসিবি প্রতি আসরে ব্যয় করছে ১৪–১৫ কোটি টাকা, বেড়েছে খেলোয়াড়দের ভাতা, ম্যাচ ফি ও বেতন। উন্নত হয়েছে পরিবহন ও আবাসন ব্যবস্থাও। তবে এই উন্নতির মধ্যেও বেশির ভাগ বিভাগ এখনও দল নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনতে পারেনি।

বছরের পর বছর স্বজনপ্রীতি ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থামেনি। আগে সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার হাতে। পরে নিয়ম করা হয়—বিভাগ থেকে ৩০ জনের প্রাথমিক তালিকা পাঠানো হবে, সেখান থেকে জাতীয় নির্বাচক কমিটি কোচ-অধিনায়কের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত দল গঠন করবে। কিন্তু প্রাথমিক দল গঠনেও বিসিবির নির্দেশনা অনেক সময় মানা হয় না।

এবার ২৭তম জাতীয় লিগ সামনে রেখে বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের প্রাথমিক দল নিয়েই বড় বিতর্ক হয়েছে। বরিশালের ক্ষেত্রে সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে এলেও পরে সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিবি। তবে রাজশাহীর ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে—বর্তমান ক্রিকেটার মাইশুকুর রহমান সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে দল নির্বাচনে যুক্ত হয়েছেন। অথচ বর্তমান খেলোয়াড়ের এই ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন অনেকে। দল নির্বাচনের দায়িত্বে থাকার কথা ছিল খালেদ মাসুদের, কিন্তু আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব না থাকায় তিনি যুক্ত হননি। সূত্রের দাবি, আট জেলার কোচদের মতামত নেওয়া হলেও আসল নিয়ন্ত্রণ ছিল মাইশুকুরের হাতে। এমনকি এই পরিস্থিতিতে জাতীয় দলের দুই তারকা মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন রাজশাহীর হয়ে না খেলার কথাও ভেবেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রাথমিক দলে আছেন, তবে মুশফিক নির্বাচকদের অনুরোধ করেছেন তাঁকে সিলেট দলে রাখার জন্য।

মাইশুকুর অবশ্য দাবি করেছেন, রাজশাহীর কোচরা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ঢাকার লিগে খেলা খেলোয়াড়দের বিষয়ে তাঁর কাছে মতামত চাওয়া হয়। তিনি কোচদের সঙ্গে ও জেলা কোচদের পরামর্শ নিয়েই দল করেছেন। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ২০১৮ সালের পর থেকে তিনি রাজশাহীর হয়ে জাতীয় লিগ খেলেননি; খেলেছেন রংপুর ও সিলেটের হয়ে।

যেখানে বেশির ভাগ বিভাগে দল নির্বাচনে অস্বচ্ছতা ও অভিযোগ রয়েছে, সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ঢাকা বিভাগ। ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সভায় জাতীয় দলের তিন সাবেক ক্রিকেটার এহসানুল হক, মেহরাব হোসেন ও নাদিফ চৌধুরীকে নিয়ে তিন সদস্যের বাছাই কমিটি গঠন করা হয় এবং তাঁরাই দল নির্বাচন করেন। পাশাপাশি পুরো মৌসুমের তত্ত্বাবধানের জন্য গঠন করা হয়েছে মনিটরিং কমিটি ও স্পনসর কমিটি, যেখানে আছেন বিসিবির সাবেক পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কসহ অভিজ্ঞরা। সিলেট বিভাগও পাঁচ সদস্যের নির্বাচক কমিটির মাধ্যমে প্রাথমিক দল গঠন করেছে।

জাতীয় লিগের সব খরচ বহন করে বিসিবি। কোচ, ম্যানেজার, ট্রেনার, ফিজিও—সবই বিসিবির দেওয়া। তাই বিতর্ক এড়াতে অনেকেই প্রস্তাব করছেন, প্রাথমিক দল নির্বাচনেও বিসিবির নির্বাচক প্রতিনিধি রাখা হোক। বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান আকরাম খান বলছেন, “সব বিভাগেই বিসিবির কোচ আছেন, তাঁরাই প্রতিনিধি। এখন তাঁদের কথা যদি না মানা হয়, তাহলে আর করার কিছু নেই।”