জুলাই আন্দোলনে হামলার আসামিকে ‘সাহসী সাংবাদিক’ সম্মাননা, সমালোচনার ঝড়

২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়
ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফয়েজ আহমেদকে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিক’ হিসেবে সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। গত ৩ আগস্ট তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিক মহলসহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) শেখ ফয়েজ আহমেদ নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানান, ২০২৪ সালে সাংবাদিকতায় সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক প্রদান করা হয়েছে।
শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি এবং জেলা ক্যাব ও সমবায় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া তিনি সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ এবং চ্যানেল এস-এর সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন শেখ মুজাহিদুল ইসলাম। মামলায় শেখ ফয়েজ আহমেদকে ৯৭ নম্বর আসামি করা হয়। এটিই জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় ফরিদপুরে দায়ের হওয়া একমাত্র মামলা।
এই পরিস্থিতিতে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একদল শিক্ষার্থী বুধবার জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত প্রতিবাদ জানান। প্রতিনিধিদলে ছিলেন আবরার নাদিম, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা, মাহমুদুল হাসানসহ অনেকে। তারা বিতর্কিত ব্যক্তিকে দেওয়া সম্মাননা বাতিল করে প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের সম্মানিত করার দাবি জানান।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “কীভাবে তিনি এই সম্মাননা পেয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। আমাদের মতামতও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জেলার সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন ও ঝাড়ুমিছিল করেন। এমনকি আত্মসাতের অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে, যদিও পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, “বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ফরিদপুর জেলা থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন শেখ ফয়েজ আহমেদ। যাচাই-বাছাই না করায় এ ভুল হয়ে থাকতে পারে।”
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, “এ খবর শুনে আমরা বিস্মিত। এটা প্রকৃত সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মানের শামিল।”