বুধবার ১৩ আগস্ট ২০২৫, শ্রাবণ ২৯ ১৪৩২, ১৮ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

একের পর এক গণপিটুনি, ১০ দিনে নিহত ৯ জন

 প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১২ আগস্ট ২০২৫

একের পর এক গণপিটুনি, ১০ দিনে নিহত ৯ জন

আগস্টের প্রথম ১০ দিনে ১৩টি গণপিটুনিতে ৯ জন নিহত, আহত ১৩; মানবাধিকারকর্মীদের মতে বিচারহীনতা ও দুর্বল পদক্ষেপে থামছে না মব সহিংসতা।

দেশে গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) হিসাবে, জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ৭৮ জন গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন। আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ঘটনা যুক্ত করলে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৭। এই সময়ে আহত হয়েছেন ২৬৬ জন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাসে’ অন্তত ১১১ জন নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুর রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্বজনদের দাবি, তাঁরা নির্দোষ ছিলেন। প্রদীপকে এগিয়ে আনতে গিয়ে প্রাণ হারান রূপলাল। মাদারীপুরেও একই দিনে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনি দেওয়া হয়, যার মধ্যে একজনের চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়।

স্বজনদের অভিযোগ, নিহত রূপলাল পেশায় ছিলেন মুচি এবং সংসার চালাতেন জুতা সেলাই করে। মেয়ের বিয়ের দিন ঠিক করার জন্য ভাগনি জামাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। তাঁর মা বলেন, “মোর ছাওয়ারে ঘরোক যাইয়া মাইরছে, আমি বিচার চাই।”

জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ায় দেশে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়েছে। অপরাধ দমনে ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকীর মতে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিক ও সংঘবদ্ধ দুই ধরনের মব সহিংসতা বেড়েছে, যার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও কাজ করছে।

আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ১৩টি ঘটনায় ৮টিতে চোর সন্দেহে গণপিটুনি হয়েছে। বাকি ঘটনাগুলো চাঁদাবাজি, পূর্বশত্রুতা বা ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে ঘটেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অভ্যুত্থানের এক বছর পরও গণপিটুনি থামছে না।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮০ শতাংশ। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচল নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের কারণে রাস্তায় হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ মানুষ।

গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দুর্বল এবং অনেক সময় তারা বিভ্রান্তিতে ভোগে। এতে জনগণের আস্থা কমছে। তাঁর মতে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও মব–ভীতি পুলিশ ও আদালত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারের শক্ত, দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।