গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন খুন — শোকে ভেঙে পড়েছে পরিবার

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সশস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)। বৃহস্পতিবার রাতের এই হত্যাকাণ্ডে শোকে পাথর হয়ে গেছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের তাঁর পরিবার।
“কী অপরাধ করেছিল আমার ছেলে? কী অন্যায় করেছিল সে?” — আহাজারি করতে করতে এমন প্রশ্নই ছুড়ে দিচ্ছিলেন তুহিনের বৃদ্ধ বাবা মো. হাসান জামাল (৮০)। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই মানুষটি ছেলের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে বারবার অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকজন অস্ত্রধারী তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। খবর পৌঁছাতেই রাতেই ভাটিপাড়ায় স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় জমায়; শোকে ভেঙে পড়েন সবাই।
তুহিনের মা সাবিহা খাতুন (৭৫) কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, “কালও বলল, আম্মা তোমাকে আগামী মাসে চোখের ডাক্তার দেখাবো। অপারেশন লাগলে করাবো। তুমি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু আমার তুহিনরে মাইরা ফেলল কারা? আমি বিচার চাই।”
পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট তুহিন ২০০৫ সালে এসএসসি, ২০০৭ সালে এইচএসসি এবং পরে ভাওয়াল কলেজ থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করেন। প্রথমে ভাইয়ের ব্যবসায় যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি এবং ২০১২ সাল থেকে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছিলেন।
স্বজনরা জানান, তুহিন রাজনীতি বা অপরাধজগতের সঙ্গে কোনোদিন যুক্ত ছিলেন না। নিয়মিত বাবা–মায়ের খোঁজখবর নিতেন। তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তার, দুই ছেলে তৌকির (৭) ও ফাহিম (৩) রয়েছেন।
বড় ভাই জসিম উদ্দিন ২০০৯ সালে ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের দায়িত্বের বড় অংশ তুহিনের ওপর এসে পড়ে। গাজীপুরে তাঁর সঙ্গে থাকেন ভাই সেলিম উদ্দিন, যিনি পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।
বোন সাইদা আক্তার রত্না কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের ফাঁসি চাই। সে কখনো খারাপ লোকদের সঙ্গে চলাফেরা করত না।”
পুলিশ বলছে, ঘটনার কারণ উদঘাটন ও হামলাকারীদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।