বাগমারায় পিআইওর কক্ষে বিএনপি নেতার হাতে দুই কর্মকর্তা লাঞ্ছিত

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কক্ষে ঢুকে দুই খাদ্য কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। সোমবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে, বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়ার ছোট ভাই ডিএম শাফিকুল ইসলাম ওরফে শাফির নেতৃত্বে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী উপজেলা কমপ্লেক্সে শোডাউন দিতে আসেন।
ঘটনার সময় ডিএম শাফি উপজেলা পরিষদের দোতলায় একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন। এরপর তার অনুসারীরা চারতলায় উঠে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিনের কক্ষে প্রবেশ করে হুমকি, ধমকি ও গালাগাল করতে থাকেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে খাদ্য নিয়ন্ত্রক পাশের কক্ষে পিআইও তরিকুল ইসলামের দফতরে আশ্রয় নেন।
তবে বিএনপি নেতার অনুসারীরা সেখানেও হানা দেন। তারা শাফির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের দাবি জানান। একই সঙ্গে পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত দুই ডিলারের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতির অভিযোগ তুলে তাদের বাতিলের দাবি তোলেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন ও খাদ্য পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং জানান, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় নতুন নিয়োগ বা পুরাতন বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে নেওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু কথা না শুনে তারা নবী নওয়াজেস আমিনকে মারধর করেন। রক্ষা করতে গিয়ে আমিরুল ইসলামও মারধরের শিকার হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় ক্যাডাররা আমিরুল ইসলামের গলা চেপে ধরেন।
ঘটনার ভিডিও করতে গেলে প্রথম আলোর বাগমারা প্রতিনিধি মামুনুর রশিদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। কিছু সময় পর ডিএম শাফি নিজে ঘটনাস্থলে এসে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ওপর চড়াও হন এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। পরে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে ভবনের নিচে চলে যান এবং সাংবাদিক মামুনের মোবাইল ফোনটি ফেরত দেওয়া হয়।
খাদ্য নিয়ন্ত্রক নবী নওয়াজেস আমিন বলেন, "বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এমন ঘটনা ঘটবে আগে থেকে অনুমান করতে পারিনি।"
চেয়ারম্যান ডিএম শাফিকুল ইসলাম শাফি বলেন, "আমি নিচে বসে ছিলাম। ঘটনার খবর পেয়ে নেতাকর্মীদের সরিয়ে নিয়েছি।"
বাগমারা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল হক ফিরোজ জানান, সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও মামুনুর রশিদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তবে পরে তা ফেরত দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা না ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে চেয়ারম্যান ডিএম শাফিকুল ইসলাম শাফিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি পদ ফিরে পান। এরপর থেকে ভাই ডিএম জিয়ার প্রভাবে শাফি এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে। থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে হামলা, দখল, ভাঙচুর ও মারামারির একাধিক মামলা রয়েছে।