রূপলাল-প্রদীপ হত্যার ভিডিও ঘিরে তোলপাড়, বরখাস্ত ৮ পুলিশ

রূপ লাল ও প্রদীপ দাস
রংপুরের তারাগঞ্জে দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য রূপলাল দাস ও তার ভাগ্নি জামাই প্রদীপ দাসকে গণপিটুনির মাধ্যমে হত্যার ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনও উদ্ধার তৎপরতা চালায়নি, এমন ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। ইতিমধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে দুই এসআইসহ আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন: এসআই আবু জোবায়ের, এসআই শফিকুল ইসলাম এবং কনস্টেবল ফারিকুদ আখতার জামান, বিরাজ কুমার রায়, হাসান আলী, ফিরোজ কবীর, মোক্তার হোসেন ও বাবুল চন্দ্র রায়। তারা মোবাইল টিমের সদস্য হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ প্রশাসন।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই আবু জোবায়েরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওসি (তদন্ত) রফিকুল ইসলামকে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে দোষীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ছড়িয়ে পড়া পাঁচ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও গণপিটুনির শিকার দুজনকে রক্ষার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো পুলিশ ভিড়ের চাপ সামলাতে না পেরে সরে যায়। এতে রূপলাল ও প্রদীপ দাসের স্বজনদের ক্ষোভ আরও বাড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, রূপলাল ভ্যানে বসা অবস্থায় জীবন ভিক্ষা চাচ্ছেন, লুঙ্গি ঠিক করছেন, কিন্তু পুলিশ তাকে উদ্ধার না করে পরিস্থিতি ছেড়ে দেয় জনতার হাতে। জনতা এরপর বেধড়ক মারধর করে দুজনকেই, একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে রড, লাঠি, গাছের ডাল, প্যাডেল, এমনকি পা দিয়েও আঘাত করতে দেখা যায় কয়েকজনকে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ওই সময় আরও ফোর্স ডাকা হলে হয়তো দুজনকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো। রূপলালের এক আত্মীয় জানান, তারা তাড়ি বহন করছিলেন—যা তাদের সম্প্রদায়ে স্বাভাবিক—এটাই দেখিয়ে জনতা তাদের চোর অপবাদ দেয়।
ঘটনার সময় পুলিশ জীবন রক্ষার বদলে সরে দাঁড়ায়—এ অভিযোগ অস্বীকার না করে ওসি এম এ ফারুক জানান, “ঘটনাস্থলে চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন এবং হাজার হাজার উত্তেজিত জনতা। তারা উদ্ধার করতে চাইলেও ভিড়ের চাপে তা সম্ভব হয়নি।”
ঘটনার পর রূপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।