সোমবার ১৮ আগস্ট ২০২৫, ভাদ্র ২ ১৪৩২, ২৩ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

২৫ হাজার অর্থ ঋণ মামলা ঝুলে আছে, কাঠামোগত পরিবর্তনের তাগিদ

 প্রকাশিত: ২২:৩৯, ১৭ আগস্ট ২০২৫

২৫ হাজার অর্থ ঋণ মামলা ঝুলে আছে, কাঠামোগত পরিবর্তনের তাগিদ

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেছেন, বিচার বিভাগ তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং বিগত এক বছরে এই খাতে বহু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। সম্প্রতি বিচার বিভাগে জুডিশিয়াল পদায়ন ও গঠন বিধিমালায় ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা বিচার ব্যবস্থার বিকাশে একটি বড় পদক্ষেপ।

রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলে ‘খসড়া বাণিজ্যিক আদালত গঠন’ বিষয়ক এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দলের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। গত জুলাই মাসে বিডা, ইউএনডিপি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) মিলে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে এক সংলাপে আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এই বিষয়গুলোকে এজেন্ডা হিসেবে গ্রহণ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং এর চূড়ান্ত খসড়া সরকারকে দেওয়া হবে, কারণ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক কোনো বিচারিক ফোরাম নেই। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধ আজও সাধারণ দেওয়ানি মামলার কাতারে নিষ্পত্তি করতে হয়, যার ফলে কার্যকর ও দ্রুত বিচার ব্যাহত হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এটি বিচারকদের ব্যর্থতা নয়, বরং কাঠামোগত অসংগতি। এর ফলে মামলার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত অর্থ ঋণ আদালতেই ২৫ হাজারেরও বেশি মামলা এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।

তিনি বলেন, পৃথক বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা একটি দীর্ঘদিনের দাবি। এটি কারও একক দাবি নয়; বরং দেশি-বিদেশি বৃহৎ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বারবার বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এই দাবি জানিয়ে আসছেন।

প্রধান বিচারপতি রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ টেনে বলেন, এসব দেশে বাণিজ্যিক আদালত গঠনের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের জন্যও এসব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হতে পারে।

তিনি প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালতের সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো— স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার নির্ধারণ, আর্থিক সীমারেখা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা, সমন্বিত মধ্যস্থতা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার (যেমন: ই-ফাইলিং, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, হাইব্রিড শুনানি), সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার এবং জবাবদিহিতা ও কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ।

তিনি জানান, বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার পর সংশ্লিষ্ট বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, মিশ্র আইন ব্যবস্থার সুফল কাজে লাগানো হবে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, এটি কেবল একটি নতুন আদালতের সূচনা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের ভিত্তি রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

সেমিনারের দ্বিতীয় সেশন বা মূল পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ। সূচনা বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা, আইনজীবী এবং সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।