বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, বৈশাখ ২৬ ১৪৩১, ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ইসলাম

মুমিনের জুমআবার : আমল ও করণীয়

 আপডেট: ০৬:২৬, ৯ জুন ২০২৩

মুমিনের জুমআবার : আমল ও করণীয়

মুমিন মুসলমানের সপ্তাহিক ইবাদতে উপস্থিত হওয়ার দিন জুমা। দিনটি আল্লাহর কাছেও সবচেয়ে সেরা দিন। এ দিন মুসলিম উম্মাহর মাঝে দেখা যায় ঐক্যের প্রতীক। সবাই ইমামের আনুগত্য করে ধৈর্যধরে মনোযোগের সঙ্গে খুতবাহ (নসিহত/উপদেশ) শোনে। কাতারবন্দী হয়ে আদায় করে দুই রাকাত নামাজ। কারণ? জুমার নামাজ ও একত্রিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।

কোরআনে জুমার গুরুত্ব
কোরআনের ঘোষণার আলোকে জুমার দিনের নামাজ ও ইবাদতের গুরুত্ব অনেক বেশি। এ নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরাও নাজিল করেছেন। সুরা জুমআ। কোরআনুল কারিমের ৬২তম সুরা এটি। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা জুমার নামাজের অসামান্য গুরুত্ব বোঝাতে এভাবে আহ্বান করেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা ; আয়াত ৯)

জুমার দিনটি মুসলিমদের সমাবেশের দিন। তাই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল জুমআ’ বলা হয়। এইদিনের বিশেষ গুরুত্ব বিভিন্ন হাদিসে এসেছে। যেমন-

* ‘আল্লাহ তাআলা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও সমস্ত জগৎকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয়দিনের শেষদিন ছিল জুমআর দিন।’ (মুসলিম)

* ‘যে দিনগুলোতে সূৰ্য উঠে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই দিনেই আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হন, এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এই দিনেই জন্নাত থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। আর কেয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে।’ (মুসলিম)

* ‘এই দিনে এমন একটি মুহুর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে, তাই কবুল হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)

* এ বিশেষ দিনে মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে মসজিদে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইমামের খুতবাহ শোনার বিধান দিয়েছেন। দিনব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি, তাওবাহ-ইসতেগফার এবং দরূদ ও ক্ষম প্রার্থনা-দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন।


জুমার দিনটি অনেক মর্যাদার। আল্লাহ তাআলা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু আগের উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়। ইয়াহুদিরা ‘ইয়াওমুস সাবত’ তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারিত করে নেয় এবং নাসারারা রবিবারকে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে মহান সৌভাগ্য দান করেন। এ জাতি আল্লাহর দেওয়া দিনটিকে নিজেদের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগির দিন হিসেবে গ্রহণ করে আনুগত্যের অসামান্য অবদান দেখিয়েছেন। পেয়েছেন রহমত বরকত মাগফেরাতে ভরপুর মর্যাদার দিন জুমা। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমরা সবশেষে এসেও কেয়ামতের দিন অগ্রণী হব। আমরাই প্রথম জান্নাতে প্ৰবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছিল। আর আমাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এতে মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দিয়েছেন। এই যে দিনটি, তারা এতে মতভেদ করেছে। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে এ দিনের সঠিক হেদায়াত করেছেন। তাহলো- জুমার দিন। সুতরাং আজ (জুমার মর্যাদা) আমাদের, কাল (শনিবার) ইয়াহুদীদের। আর পরশু (রোববার) নাসারাদের।’ (বুখারি, মুসলিম)

জুমার দিন কাতারবন্দি

জুমার নামাজের আজান দেওয়ার পর দুনিয়াবি সব কাজ স্থগিত করে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে কাতারবন্দী হওয়ার আদেশ দিয়েছেন আল্লাহ। আর পরের আয়াতে দিয়েছেন রিজিকের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ-

فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

এরপর যখন নামাজ শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।’ (সুরা জুমা, আয়াত ১০)।

প্রখমে আল্লাহর হক আদায় করার মাধ্যমে আখিরাতের সম্পদ অর্জন করার ঘোষণা এবং পরে দুনিয়াবি সম্পদ তথা স্বাভাবিক রুটিরুজির অন্বেষণে ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে কোরআনে।

গুরুত্ব ও ফজিলত

জুমার এ দিনের আমল সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ববাসীকে আহ্বান করেছেন, দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যা ছিল কোরআনের নির্দেশের বহিঃপ্রকাশ।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম)

আমলের দিক থেকেও দিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এ দিনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক ঘটনা।
১. কেয়ামতের অনুভূতি- জুমার দিন মানুষকে কেয়ামতের দিন একত্রিত হওয়ার অনুভূতি জাগ্রত করে দেয়। যেভাবে মানুষ জুমার দিন প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হয়। কেয়ামতের দিন সব মানুষকে আল্লাহর দরবারে একত্রিত হতে হবে।
 

মন্তব্য করুন: