শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১৩ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রাসূল সা: এর অনিন্দ্য সুন্দর বিনয় ও সারল্য

 প্রকাশিত: ১০:২২, ২৮ আগস্ট ২০২১

রাসূল সা: এর অনিন্দ্য সুন্দর বিনয় ও সারল্য

আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা) ছিলেন অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ এক মানুষ। তিনি ছিলেন অনবদ্য বিনয় এবং সারল্যের অধিকারী এক ব্যক্তিত্ব যার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যদি আমরা তার সুন্নাহ মেনে চলি তাহলে আমরা নিজেদের জীবনযাত্রায় কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সাধন করতে পারব। 

আমরা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে একে অপরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। এটি চূড়ান্তভাবে অহংকারের জন্ম দেয়। এই অহংকারই একে অপরের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি নিয়ে আসে। 

নবী করীম (সা) এর অসংখ্য অনুসারী থাকা সত্ত্বেও তিনি আচরণে ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী। কখনোই তিনি তার সাহাবী কিংবা অন্যদের সামনে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে উপস্থাপন করেননি। 

মুহাম্মদ (সা) কখনোই ক্ষমতাধর ব্যক্তি কিংবা রাজা বাদশাহদের মতো সম্মানিত হওয়া পছন্দ করতেন না। তিনি তার সম্মানে অন্যদেরকে দাঁড়াতে কিংবা হাঁটু গেড়ে বসতে নিষেধ করতেন। তিনি খুবই সাধারণ একটি বাড়িতে বসবাস করতেন এবং অতি সাধারণ খাবার খেতেন। 

নবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি এই প্রভাবকে নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কাজে ব্যবহার করেননি। সমৃদ্ধের মাঝে নয়, বরং তার জীবন কেটেছিল মানবতা এবং বিনয়ের নিবিড় ছোঁয়ায়।

   আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত: 

"যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করে নি-  কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় মালা হিসেবে পরিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পার্শ্বে কামড় দিয়ে বলতে থাকবে- আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।" (আল-বুখারী, ১৪০৩)
 

একবার রাসূল (সা) তার কিছু সাহাবীদের সাথে সফরে ছিলেন। যখন খাবার তৈরির সময় হলো, তিনি তখন একটি ভেড়া জবাই করার নির্দেশ দিলেন। 

 একজন সাহাবী বললেন: আমি ভেড়াটি জবাই করব, অন্য জন বললেন: আমি এটার চামড়া ছাড়াবো। তৃতীয় জন বললেন: আমি রান্না করবো। এরপর আল্লাহর রাসূল (সা) বললেন:

  আমি আগুনের জন্য কাঠ সংগ্রহ করব। 

 তারা বললেন: "না। আপনার সে কাজের জন্য আমরাই যথেষ্ট।"

আমি জানি তোমরা আমার জন্য তা করতে পারো। কিন্তু আমি এভাবে সুবিধা নেয়াকে অপছন্দ করি। আল্লাহ সেই বান্দাকে ঘৃণা করেন যে অন্যের কাছ থেকে সুযোগ নেয়।

    তাই তিনি উঠলেন এবং আগুন ধরানোর জন্য কাঠ সংগ্রহে লেগে পড়লেন। 

   (খুলাসা আস-সিয়ার, পৃ. ২২)

মুহাম্মদ (সা) ছিলেন একজন অনুকরণীয় স্বামী এবং পিতা। কয়েকজন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের সবাইকে তাদের প্রাপ্য অধিকার দিতেন, সমান চোখে দেখতেন। 

এছাড়াও তিনি বাড়ির কাজেও তাদেরকে সাহায্য করতেন। নিজেই নিজের জুতা এবং কাপড় সেলাই করতেন। একজন ভালো স্বামী এবং ভালো বাবা হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ। নারীদেরকে তিনি খুব মর্যাদা দিতেন। 

   আবু সাঈদ আল-খুদরী (রা) বলেন: 

কোনো নারীর খাস কামরায় তিনি থাকতেন একজন কুমারী মেয়ের চেয়েও লজ্জাশীল। যখন তিনি কোনো কিছুর উপর বিরক্ত হতেন, সেটার ছাপ তার মুখে পড়তো। তিনি কখনো কারও দিকে তাকাতেন না, সবসময় চোখ নামিয়ে রাখতেন। তিনি যত বেশি না আকাশের দিকে তাকাতেন, তার চেয়ে বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন মাটিতেই। কারও প্রতি তাকাতে হলে তিনি তাকে এক পলক দেখে নিতেন।
   (আল-বুখারী ১/৫০৪)

   গরীবদের প্রতি মহানুভবতা 

নবী করীম (সা) গরীব এবং অভাবীদের প্রতি সবসময়ই ছিলেন সদাচারী। তিনি কখনোই দাস দাসীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। তিনি তাদেরকে একইভাবে মর্যাদা দিতেন। নববধূ খাদিজার কাছ থেকে তিনি যখন উপহার হিসেবে যায়েদ ইবনে হারিসা (রা) কে পান, তিনি তার সাথে এতটাই মমত্বের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন যে তাকে পালক পুত্র হিসেবে লালন পালন করতে থাকেন। পরবর্তীতে যায়েদ রাসূল (সা) এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেন। 

   আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা) বলেন: 

"যে ব্যক্তি কোনো বিধবা এবং একজন দরিদ্র ব্যক্তির  দেখাশোনা করে, তার সাদৃশ্য আল্লাহর পথে লড়াইকারী একজন যোদ্ধা অথবা সেই ব্যক্তির মতো- যে দিনে রোজা রাখে এবং সারা রাত নামাজ আদায় করে।"
     (আল-বুখারী, ৬০০৬)

নবীজীর চরিত্র ছিল এমন, যা দেখে মানুষ ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। তিনি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন সম্পর্কে অবগত ছিলেন এবং জানতেন আমাদের চূড়ান্ত আবাস পরকালে। 

তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদেরকে নিজেদের কাজের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত এবং একজন ভাল মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন যাতে আমরা আশপাশের সকলের জন্য উত্তম উদাহরণ হতে পারি।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: