‘শিরক’ ইস্যুতে বটগাছ কর্তন নিয়ে হইচই, ইউএনওর নেতৃত্বে তদন্ত চলমান

গাছের মালিক সাত্তার হাওলাদার
মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলমমীরকান্দি গ্রামে ‘শিরক’ আখ্যা দিয়ে একটি পুরোনো বটগাছ কাটার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয় প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনা নিয়ে বুধবার দুপুরে সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গাছের মালিক সাত্তার হাওলাদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব, মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা, সদর থানার ওসি আদিল হোসেনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
গাছের মালিক সাত্তার হাওলাদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, “আমি যেখানে গাছটি লাগানো, সেই জায়গায় নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে চাই। অনেক দিন ধরেই গাছটি বিক্রি করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কাটা খরচ বেশি হওয়ায় কেউ নিতে চায়নি। পরে শ্রীনদী বাইতুস সুন্নত ক্যাডেট মাদ্রাসার কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করি। তারা কেবল ডালপালা কাটেছে, পুরো গাছ এখনও কাটা হয়নি।”
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ৫ মে স্থানীয় মুসল্লিদের ‘শিরক’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে গাছটি কাটার চেষ্টা করা হয়। সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। এরপর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গাছ কাটা বন্ধ করা হয় এবং ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। অন্য দুই সদস্য হলেন শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কবির হোসেন এবং ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছটি দেখেছি। এটি শতবর্ষী নয়, বয়স আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ বছর হবে। যেহেতু এটি ব্যক্তিগত জমিতে রয়েছে, তাই জমির মালিক গাছ কর্তন করতে পারেন। আইনগতভাবে এতে তেমন বাধা নেই।”
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মাতুব্বর বলেন, “আমরা গাছটি মাদ্রাসার কাজে ব্যবহারের জন্য কিনেছি এবং খরচ বাঁচাতে নিজেরাই কর্তন শুরু করি। সেই কাজের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় এখন এটি আলোচনায় এসেছে।”
ইউএনও ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”