শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, বৈশাখ ২৬ ১৪৩২, ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ব্রেকিং

আইভীর বাড়িতে পুলিশ, অনুসারীদের জটলা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী ধাপের আলোচনার কর্মপরিকল্পনা দ্রুত চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই: মির্জা ফখরুল তথ্যযুদ্ধ: কতটা সত্যি বলছে ভারত ও পাকিস্তান? ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতে এরপর কী? পাকিস্তান ভারত সীমান্তে উত্তেজনার নতুন অধ্যায়: ক্ষেপণাস্ত্র, হামলা ও তথ্যযুদ্ধ আওয়ামী লীগের দুই সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে: আসিফ মাহমুদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে নেতৃত্ব পরিবর্তন: স্নিগ্ধর পদত্যাগ আবদুল হামিদের দেশত্যাগে জড়িতদের ধরা হবে, না হলে আমিই চলে যাব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার সংবাদপত্রের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চায় : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট ২০২৫: টেকনোলজির ঝড় উঠছে! ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী প্রভাব, করণীয় কী রক্তের প্রতিটি ফোঁটার বদলা নেব: শেহবাজ শরিফ

ফিচার

শারীরিক প্রতিবন্ধী ফ্রিল্যান্সার যোবায়ের মাসে আয় ৩০হাজার টাকা

 প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ১ জুলাই ২০২৪

শারীরিক প্রতিবন্ধী  ফ্রিল্যান্সার যোবায়ের মাসে আয় ৩০হাজার টাকা

শুধু একটি আঙুল নাড়াতে পারেন যোবায়ের। তবু থেমে নেই। কুমিল্লায় থেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মাসে আয় করেন ৩০ হাজার টাকা। ২৪ বছর বয়সী মো. যোবায়ের হোসেনের চলনশক্তি নেই বললেই চলে শুধু ডান হাতের বৃদ্ধাআগুল সামান্য নাড়াতে পারেন। এই বৃদ্ধাআগুল দিয়ে তিনি কম্পিউটারে মাউস নাড়ান। মস্তিষ্ক যেহেতু সচল, তাই মাউস দিয়ে সৃজনশীল কাজে মগ্ন থাকেন শারীরিক প্রতিবন্ধী যোবায়ের।

কুমিল্লা শহরের মোগলটুলিতে যোবায়েরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ছোট একটা ঘরে বসে আঙুল নাড়িয়ে, মাউস দিয়ে কম্পিউটারে কাজ করছেন যোবায়ের। এভাবে কাজ করে মাসে আয় করেন ৩০ হাজার টাকার বেশি। মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে কুমিল্লায় বসে করেন বিদেশি গ্রাহকদের কাজ। তিন চার বছরে প্রায় ৫০ দেশের ৩০০টির বেশি কাজ করেছেন।

ডিপ্লোমা প্রকৌশলী এ কে এম মমিনুল ইসলাম ও গৃহিণী জেবা ইসলামের তৃতীয় ছেলে যোবায়ের হোসেনের জন্ম ২০০০ সালের ৬ মে। একটু বড় হওয়ার পর শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও উপসর্গ দেখে চিকিৎসকেরা জানান, যোবায়ের স্পাইনাল মাসক্যুলার অ্যাট্রোফি নামের স্নায়ু ও পেশির জটিল রোগে আক্রান্ত। এটি জন্মগত ভাবে সৃষ্ট মেরুদন্ডের একটি ত্রুটি, যে কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চালিত হতে পারে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে চলনশক্তি কমতে থাকে রোগীর। যোবায়েরের বড় দুই ভাই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। ছোট বোন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী।

যোবায়েরের মা জেবা ইসলাম বাসসকে বলেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যোবায়ের স্কুলে আনা-নেওয়া করেছি। তবে ওই সময় থেকে ওর লেখার গতি কমতে থাকে। শারীরিক জটিলতা বাড়তে থাকায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে স্কুলে যাতায়াত বাদ দিতে হয়। শুধু পরীক্ষায় অংশ নিতে স্কুলে যেতেন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রুতলেখক হিসেবে ছিলেন তাঁর ছোট বোন।

ছোটবেলা থেকে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ যোবায়েরের। বড় ভাইয়ের কম্পিউটার ব্যবহার করতেন। ভিডিও গেমসের পাশাপাশি ইউটিউব দেখে কিছু সফটওয়্যারের কাজ শেখেন যোবায়ের। বড় ভাইকে দেখে দেখে প্রকৌশল নকশা করার সফটওয়্যার অটোক্যাডের ব্যবহারও দেখেন।

১৪ বছর বয়সে কি বোর্ড চালানোর ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন যোবায়ের। এক হাতে মাউস চালানো অসাধ্য হয়ে ওঠে। বইয়ের পৃষ্ঠা ওলটাতে কষ্ট হতো বলে কম্পিউটারে পিডিএফ বই পড়া শুরু করেন। অনেকটা জেদের বশে ইন্টারনেটে খুঁজতে থাকেন নিজের উপযোগী কাজ। একসময় যোবায়ের আবিষ্কার করেন, গ্রাফিক ডিজাইনে তাঁর আগ্রহ কাজ করছে। এ নিয়ে ইন্টারনেটে তথ্য ঘাঁটাঘাঁটির পাশাপাশি ইউটিউব দেখে বিভিন্ন নকশা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আবার বাধা! এবার সমস্যা হয়ে দাঁড়াল বড় ভাইয়ের পুরোনো কম্পিউটার। ছবি বা গ্রাফিকসের কাজ হলে ধীরগতির হয়ে যেত। তাঁর আগ্রহ দেখে বাবা কম্পিউটার কিনে দেন।

যোবায়ের আবার শুরু করেন গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ। এবার জোর দেন দক্ষতা বাড়ানোয়। স্থানীয় এক পেশাদার গ্রাফিক ডিজাইনার রাকিবুল ইসলাম এগিয়ে আসেন তাঁকে সহযোগিতা করতে। মূলত রাকিবুলের মাধ্যমে তাঁর পেশাগত কাজের শুরু।

যোবায়েরের প্রচেষ্টা ও কাজের একাগ্রতা দেখে তিনি তাঁকে নিজের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ দেন। এভাবে শুরু হয় গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে যোবায়েরের যাত্রা।

যোবায়েরের বাবা এ কে এম মমিনুল ইসলাম বলেন, বলার জন্য বলছি না। আমার ছেলের জন্য আমার গর্ব হয়। যোবায়ের এখন প্রায় প্রতিদিন নানা রকম ম্যাগাজিন, ফ্লায়ার, পণ্যের ক্যাটালগ, পুস্তিকা, ভিজিটিং কার্ড, মেনু কার্ড ইত্যাদির নকশা করেন। এগুলো সবই বিদেশি গ্রাহকের কাজ। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রায়ই অনলাইন সভা করতে হয় তাঁকে। শুরুর দিকে কিছুটা জড়তা থাকলেও সব কাটিয়ে এখন কাজকে উপভোগ করছেন যোবায়ের।

যোবায়ের বলেন, আমার আজ এই জায়গায় আসার পুরো কৃতিত্ব পরিবারের। পরিবারের সবাই আমার যতœ নেন। আমার করা নকশার প্রশংসা করেন, উৎসাহ দেন। আমাকে বুঝতে দেন না যে আমি অন্যদের থেকে আলাদা। পরিবারের উৎসাহ আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

যোবায়েরের চলার পথ মসৃণ ছিল না। চলাফেরা ও শারীরিক অক্ষমতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে তিনি এগিয়ে গেছেন নিজের মতো করে। ২০২০ সালে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শুরু করেন যোবায়ের। আয় শুরু হয় পরের বছর থেকে। প্রথম দিকে অন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে করতেন, পরে সরাসরি বিদেশি গ্রাহকদের সঙ্গেই কাজ করতে থাকেন। তিনি আজ একজন সফল ফ্রিল্যান্সার।

নবীন ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশে যোবায়েরের পরামর্শ অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো কাজের জন্য জেদ ধরে লেগে থাকতে হবে। ভালোভাবে জেনেবুঝে চেষ্টা করলে সফলতা আসতে বাধ্য। প্রয়োজন শুধু হাল ছেড়ে না দিয়ে সাধ্যমতো চেষ্টা করা।
যোবায়ের বলেন, হাল ছেড়ে দিলে আজ আমি এত দূর আসতে পারতাম না। আমার করা কোনো নকশা বা কাজ নিয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন করছে, প্রচারণা চালাচ্ছে এমন ভেবে গর্বিত হতে পারতাম না। চেষ্টা করলে, সফলতা আসবেই।