আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে মধ্যরাতে যমুনায় বিক্ষোভ

যমুনার সামনে বিক্ষোভ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকশ বিক্ষোভকারী।
যমুনামুখী সব সড়ক বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। কাকরাইল মোড়, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, মিন্টু রোডের মোড় থেকেই পুলিশ যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।
তবে ছোট ছোট মিছিলগুলোকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। কাউকেই রিকশা, মোটরসাইকেল বা গাড়ি ব্যারিকেডের ভিতরে নিতে দেওয়া হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
রাত ১টার দিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি মিছিল যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়।
যমুনায় ব্যারিকেডের সামনে এক সারি পুলিশ দাঁড়ানো। ব্যারিকেডের ভেতরে আর্মড পুলিশ, এরপর ডিবি ও এরপর সেনাবাহিনীর সদস্যরা দাঙ্গা দমনের উপকরণসহ অবস্থান নিয়েছেন। তাদের হাতে রয়েছে ঢাল ও লাঠি। জড়ো হওয়া জমায়েতে স্লোগান ধরেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় এ কর্মসূচির ডাক দিয়ে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়েছেন।
সেখাতে রাত ১০টা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করার কথা বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি লিখেছেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত আজ রাত ১০টা থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলবে। যার এজেন্ডায় গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট বয়ান নাই, তার সাথে আমরা নাই।”
১০ মিনিটের মধ্যে আড়াইহাজার মন্তব্য ও এক হাজার শেয়ার এসেছে হাসনাতের পোস্টে।
তার পোস্টকে সমর্থন করে অধিকাংশ মন্তব্য এলেও বেশকিছু বিরোধী মন্তব্যও দেখা গেছে। অনেকে বিষয়টিকে নাটক বলেও মন্তব্য করেছেন।
এখন পর্যন্ত নেওয়া সেরা ডিসিশন/১০০% ক্যাপ্টেইন/সহমত ভাই/সহমত পোষণ করছি/সেরা ডিসিশন ক্যাপ্টেন/ইনকিলাব জিন্দাবাদ ইত্যাদি মন্তব্য এসেছে।
আবার ‘বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ যেকোনো মূল্যেই আওয়ামী লীগ সরকার চায়, এজন্য আওয়ামী লীগের হাতে দেশটা তুলে দেওয়া উচিত/আর নাটক কইরেন না আপনারা, আপনাদের নাটক দেখতে দেখতে জনগণ অতিষ্ঠ/হাসনাত হঠাও দেশ বাঁচাও, পাকিস্তানি হঠাও’-ইত্যাদি ধরনের মন্তব্য আছে সেখানে।
বুধবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশ ত্যাগের পর থেকেই সোচ্চার হয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় একটি হত্যার ঘটনায় কিশোরগঞ্জ সদর থানার একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আব্দুল হামিদকেও আসামি করা হয়েছে।
তিনি দেশত্যাগ করার পর বৃহস্পতিবার ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে।
পাশাপাশি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে থাই এয়ারওয়েজে সাবেক রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ছেড়ে যাওয়ায় বুধবার রাতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
এর অংশ হিসেবে বুধবার রাতের পালায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওসি ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে এটিএসআই মো. সোলায়মানকে।
‘আজ রাতেই ফয়সালা হবে’
রাতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও নিজের ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে সবাইকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, “সবাই চলে আসুন। জুলাইয়ের সকল শক্তি, সকল শহীদ পরিবার ও আহতদের আহ্বান জানাই রাজপথে নেমে আসুন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে।”
নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি ফ্যাসিস্ট ও খুনী আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। আসামীদের জামিন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকারের রাষ্ট্রপতিকে চোখের সামনে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। বিচার প্রশ্নে সরকারের প্রতি আমাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।”
তিনি বলেছেন, “জুলাইয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল খুনীদের বিচার। এবং মুজিববাদীরা বাংলার মাটিতে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না। আজ রাতেই ফয়সালা হবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে।
আওয়ামী লীগের বিচার, নিবন্ধন বাতিল ও রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ থেকে উঠবো না।”