একমাসের মধ্যে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দাবি এনসিপির
মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে প্রাণদণ্ডাদেশ পাওয়া শেখ হাসিনার রায় কার্যকরে এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছে চব্বিশের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সোমবার শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ।
সেখানে শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তিনিও তার নেত্রীর মত ভারতে পালিয়ে আছেন।
সোমবার রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় বাংলামটরে এনসিপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, গুম এবং গণহত্যার দায়ে দণ্ডিত অপরাধী কেবল বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম।
“খুনি, রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট হিসেবে শেখ হাসিনা পরিচিতি লাভ করেছে। ফলে শেখ হাসিনার বিচারের মধ্য দিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে যত স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট শাসক রয়েছে, তার বিচারের এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
এ সময় একমাসের মধ্যে রায় কার্যকর করার জন্য সময় বেঁধে দেন অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেতা।
নাহিদ বলেন, “আমরা এটি দাবি জানাচ্ছি যে আমাদের শেখ হাসিনার এই রায়কে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে এই রায় কার্যকর করতে হবে।
“আমরা মনে করি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যে সকল অপরাধ সংগঠিত করেছিল, সেই বিচারের যে আন্দোলন, যে লড়াই, সেটিতে আমরা এক ধাপ এগোলাম।”
তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালেরও মৃতুদণ্ডে কার্যকরের দাবি জানান।
নাহিত বলেন, “এছাড়া যে সকল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সকল ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসর এবং যে সকল সরকারি কর্মকর্তারা অভিযুক্ত, তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
“এবং এই যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটা অব্যাহত থাকতে হবে। এখানে কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি যাতে না আসে, সেজন্য সকলকে মিলে কাজ করতে হবে।”
হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান, যার মাথার ওপর ঝুললো মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া।
আর সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার রায় এল, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য।
এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।
জুলাই আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে প্রথম অভিযোগে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
দ্বিতীয় অভিযোগে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’, চতুর্থ অভিযোগে চাঁনখারপুলে ছয় হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনাতেও শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। এই তিন অভিযোগ মিলিয়ে তাকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
চতুর্থ অভিযোগে চাঁনখারপুলে ছয় হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল।
তাদের মধ্যে কামালকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। আর মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে তথ্য দিয়ে অপরাধ প্রমাণে সহযোগিতা করায় তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।