আচরণবিধি মানাবেন কীভাবে? ইসি বলছে, কোনো আপস নয়
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে বড় দলগুলোকে আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা নিয়ে সংশয়ের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্র দখল, অনিয়ম ও গোলযোগের শঙ্কার কথা সংলাপে বলেছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
এমন আশঙ্কার জবাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, আইন ও বিধি পরিপন্থি কাজে ছাড় দেওয়া হবে না। বিধি ভাঙলেই ‘পেরেশানিতে পড়তে’ হবে অমান্যকারীদের। কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হবে আচরণবিধি।
সোমবার নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপের তৃতীয় দিনের সকালের পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন আচরণবিধি প্রতিপালনে দলগুলোর সহায়তা চান।
আচরণবিধির বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগে ইসি কঠোর হবে বলেও দলগুলোকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সিইসি বলেন, “যত ঝঞ্ঝা, যত সাইক্লোন, ঝড় আসুক না কেন—আমরা এটা মোকাবিলা করে একটা সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য যত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমাদের পক্ষ থেকে নেব। এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।”
‘শঙ্কা আর অনাস্থা’
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বলেন, “একই কায়দায় আগের নির্বাচন কমিশনারও আলোচনা করতেন। বড় আফসোস, সুষ্ঠু নির্বাচন স্বাধীনতার পরে দেখেনি। ভোট বলতে মানুষ শঙ্কাবোধ করছে, ভোটের প্রতি অনাস্থা, জনগণ বিমুখ হয়েছে।”
তিনি বলেন, ইসি যদি মনে করে ভালো নির্বাচন করবে, তাহলে সম্ভব। ভারতের টিএন সেশনের মতো ভালো নির্বাচনের লক্ষ্যে এগোলে আলোচনা সার্থক হবে।
‘বড় দলই মানে না আচরণবিধি’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান আচরণবিধি প্রতিপালনের প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বলেন, বড় দুই দল আচরণবিধি মানে না। আচরণবিধি কীভাবে মানাবেন সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
“মূল সমস্যা দুতিন জায়গায়। আচরণবিধি সব সময় ছিল, থাকবে। কিন্তু বড় দুতিনটা দল, এখানে বড় দু দল আচরণবিধি মানে না। তাদেরকে কীভাবে মানাবেন? এটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
“আপনি কি আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য বড় দলের প্রার্থীকে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবেন? আপনি যদি পারেন তাহলে আমরা বিশ্বাস করবো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে।”
২০০৮ সালে ও বিগত কয়েকটি ভোটের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আচরণবিধি বা ভোটের বিষয়টি কাগজে কলমে থাকলেও মাঠে তা হয় না।
“কেন্দ্রের ভেতরে থাকে দলীয় কর্মীরা, ওরা জোর করে ভোট নিয়ে যায়। ভোটতো হয় না। আমরা কাগজের কলমে ভোটের কথা বলি, কিন্তু বাস্তবে আসেন।”
তিনি বলেন, “বিধি ভঙ্গের জন্য দুটি, ৫টা -১০টা আসনে প্রার্থিতা বাতিল করলে বাকিরা সোজা হয়ে যাবে।”
তার ভাষ্য, “সেনাবাহিনী মাঠ পাহারা দেয়, কেন্দ্র পাহারা দেয় না। বাস্তবতার নিরিখে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আচরণবিধি, বই পুস্তক মানবো, কিন্তু ভোটের দিন কেন্দ্র দখল করে নিয়ে যাবে। দেখেছি, সামনেও হবে।
“প্রতিহত করতে পারলে, বাস্তবের নিরিখে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ভোট সুষ্ঠু হবে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে।”
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম লিখিত প্রস্তাবে বলেন, এবার সংসদীয় প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি গণভোটের উত্তর দিতে হবে। প্রত্যেক ভোটকক্ষে সময় বেশি লাগতে পারে। তবে ভোটার যেন বেশি সময় না নেয় তা বিবেচনায় নিতে হবে। ভোটার উপস্থিতিও বাড়তে পারে।
ভোটকেন্দ্র ও বুথ সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।
আরও যত দাবি
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
একইসঙ্গে নির্বাচনে অবৈধ ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান করেন তিনি।
ব্যানার ও পোস্টার বিলীন করা সঠিক হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পোস্টার ছাড়া জনগণের কাছে প্রার্থীর পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম। এ পোস্টারের মাধ্যমে সবাই চেনে, আমি সৎ লোখ কিনা জানবে না। পোস্টার, ব্যানার এটা ভালো জিনিস।”
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না আবু লায়েস মুন্না লিখিত প্রস্তানে বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন মূলত স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে সরকারমুখী থাকে। এ দুই মন্ত্রণালয়কে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনতে হবে।
কোনো ‘আপস’ করবে না ইসি
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “সামনে নির্বাচনে যারা আইন বিধি লঙ্ঘন করবেন, তারা নির্ঘাত পেরেশানিতে পড়বেন এটা নিশ্চিত। কোনো বিষয়ে ইসি আপস করবে না।”
তিনি বলেন, পরিস্থিতি শক্তভাবে মোকাবেলায় আরপিও, আচরণবিধি ও প্রাসঙ্গিত বিধিগুলো সংস্কার করা হয়েছে।
দলগুলোর সহযোগিতা চেয়ে তিনি ইসির কঠোর বার্তার পাশাপাশি ভোটের জন্য আইনশৃঙ্খলাসহ যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা তুলে ধরেন।
“রিটার্নিং অফিসার অনিয়ম হলে একটি আসন পুরোটাই বাতিল করতে পারবে, তার এক্ষমতা দেওয়া থাকবে। অনিয়ম হলে কেন্দ্র বাতিল করবেন প্রিজাইডিং অফিসার। আচরণবিধি কঠিনভাবে প্রয়োগ করা হবে, আচরণবিধি পরিপন্থি কাজে ইসি আপস করবে না।”
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।
সংলাপের এ ভাগে নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।