হাসিনার ভাগ্যে কী? রায় দিচ্ছে ট্রাইব্যুনাল
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ কী সিদ্ধান্ত দেয়, তা জানার অপেক্ষায় পুরো দেশ।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সোমবার সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করেন তিন বিচারপতি। বেলা সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল থেকে এ রায়ের মূল আদেশ সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
প্রারম্ভিক বক্তব্যে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এ মামলায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায় সাজানো হয়েছে ছয়টি ভাগে।
শুরুতে বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী ট্রাইব্যুনালের জুরিসডিকশন, অভিযোগগুলো এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির গ্রাউন্ড পড়ে শোনান।
এরপর আদালতে উত্থাপিত তথ্য উপাত্তগুলো পড়ে শোনান বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
আন্দোলন দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলির ‘নির্দেশে’ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়ার শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোন কথোপকথন তুলে ধরেন তিনি।
একই সময়ে হেলিকপ্টার থেকে ‘ছত্রী সেনা নামানোর’ বিষয় শেখ হাসিনা এবং হাসানুল হক ইনুর কথোপকথন তুলে ধরা হয়।
তথ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন থেকে শত শত মানুষকে হত্যা ও আহত করার পেছনে ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার’ বিষয়ও টানা হয় রায়ে।
সবশেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন।
মামলার একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় ট্রাইবুনালে এনে হাজত খানায় রাখা হয়। তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার আরেক আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ চলে।
প্রসিকিউশন তাদের দুজনের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আদালতের কাছে প্রেয়ার করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে প্রেয়ার হচ্ছে যে এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।”
জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত অনেকের স্বজনরাও রায়ের আগে ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থিত হয়েছেন । শেখ হাসিনাসহ এ মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাইছেন তারাও।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এ বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সোমবার সকালে তিনি ট্রাইব্যুনালের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে খালাসের প্রত্যাশা করেন।
‘নির্ভয়ে ও সবার সহযোগিতায়’ মামলা পরিচালনা করেছেন বলেও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন আমির।
রায় ঘিরে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজির পাশাপাশি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে।