সোমবার ১৭ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

হাসিনার রায়ের আগে সহিংসতার হুঁশিয়ারি ছেলে জয়ের

 আপডেট: ১০:৪৬, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

হাসিনার রায়ের আগে সহিংসতার হুঁশিয়ারি ছেলে জয়ের

চব্বিশের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তাদের দল আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তোলা না হলে সমর্থকেরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ‘ঠেকিয়ে’ দেবে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পরিস্থিতি তেমন হলে শেষ পর্যন্ত বিক্ষোভ গড়াতে পারে ‘সহিংসতায়’।

জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের ঠিক আগে রোববার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জয়।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করবে।

আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন।

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা আদালতের দৃষ্টিতে পলাতক। সে কারণে এ মামলার শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তিনি পাননি।

তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলা।

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ভারত তার মাকে ‘পুরো নিরাপত্তা’ দিচ্ছে এবং তাকে ‘রাষ্ট্রপ্রধানের মতো’ দেখভাল করছে।

“আমরা খুব ভালোভাবেই জানি রায় কী হবে। তারা তো সরাসরি সম্প্রচার করবে। তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে, আর সম্ভবত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেবে। আমার মায়ের কী করতে পারবে তারা? আমার মা ভারতে নিরাপদ। ভারত তাকে পুরো নিরাপত্তা দিচ্ছে।”

রয়টার্স লিখেছে, এ বিষয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিক্রিয় জানতে চেয়েছিল তারা; তবে সরকারপ্রধানের দপ্তরের মুখপাত্র সাড়া দেননি।

অক্টোবরে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেছিলেন, তিনি দিল্লিতে ‘স্বাধীনভাবে’ চলাফেরা করতে পারেন, যদিও নিরাপত্তার কারণে সতর্ক থাকতে হয়।

১৯৭৫ সালের একদল সেনাসদস্য শেখ হাসিনার বাবা, বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানন এবং তাদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করে। তখনও দীর্ঘদিন ভারতে নির্বাসিত জীবন কেটেছে শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার।

সম্প্রতি রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে তাকে ‘দোষী’ সাব্যস্ত করবে, সেটা ‘অবধারিত’, কারণ তার ভাষায় ‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসন’।

আর তার ছেলে জয় বলেছেন, আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়ে ভোটে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না এলে তারা আপিল করবেন না।

জুলাই হত্যার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা দলটির নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না।

জয় বলেন, “আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন আমরা হতে দেব না। আমাদের বিক্ষোভ আরও তীব্র হবে। যা দরকার তাই করব আমরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে…সংঘাত হবেই।”

শেখ হাসিনার রায় ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি এবং যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের নাশকতাকারীদের গুলির নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ প্রধান।

প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাশকতার অভিযোগে আটক করা হচ্ছে। রাজধানীতে পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা সদস্যদের টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জয় সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি এবং তার মা শেখ হাসিনা দেশে আওয়ামী লীগকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন; তবে অন্তর্বর্তী সরকার বা বিএনপির সঙ্গে তাদের ‘যোগাযোগ নেই’।

“গত কয়েক দিন আপনি দেখছেন—সারা দেশে শাটডাউন, বড় বড় বিক্ষোভ। এগুলো আরও বড় হবে।”

রয়টার্স লিখেছে, টানা দেড় দশক ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা একদিকে অর্থনীতি বদলে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব পেয়েছেন, আবার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দমন-পীড়নের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছেন।

তার সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দুটি বর্জন করে বিএনপিসিহ অধিকাংশ বিরোধী দল। এই ১৫ বছরে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দফায় দফায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যেতে হয়।

সেই পরিস্থিতি এখন উল্টে গেছে। জয় রয়টার্সকে বলেন, “তিনি (শেখ হাসিনা) হতাশ, রাগান্বিত, ক্ষুব্ধ। আর আমরা সবাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—যে কোনো উপায়ে লড়াই চালিয়ে যাব।”