সোমবার ১৭ নভেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

 আপডেট: ১৫:৫৬, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দোর্দণ্ড প্রতাপে দেড় দশক দেশ শাসন করা হাসিনা ১৫ মাস আগের ওই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়ে এখন পালিয়ে আছেন ভারতে। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম সাবেক সরকারপ্রধান, যার মাথার ওপর ঝুললো মৃত্যুদণ্ডের খাঁড়া।

আর সেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকেই শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজার রায় এল, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য।

এই ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতে ইসলামীর পাঁচ শীর্ষ নেতা এবং বিএনপির একজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই বিচারক হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের এই রায় এল তার বিয়ে বার্ষিকীর দিনে। ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল।

হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। তিনিও তার নেত্রীর মত ভারতে পালিয়ে আছেন।

এ মামলার তিন আসামির মধ্যে সেই সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। সেজন্য ট্রাইব্যুনাল তাকে লঘুদণ্ড হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

কারাগারে থাকা মামুনকে এদিন রায়ের জন্য আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে তাকে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হয় কারাগারে।

জুলাই আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট ৫ অভিযোগ আনা হয়েছিল এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে প্রথম অভিযোগে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য শেখ হাসিনাকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।

দ্বিতীয় অভিযোগে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ‘হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ’, চতুর্থ অভিযোগে চাঁনখারপুলে ছয় হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনাতেও শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। এই তিন অভিযোগ মিলিয়ে তাকে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।

চতুর্থ অভিযোগে চাঁনখারপুলে ছয় হত্যা এবং পঞ্চম অভিযোগে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে ট্রাইব্যুনাল।

তাদের মধ্যে কামালকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। আর মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে তথ্য দিয়ে অপরাধ প্রমাণে সহযোগিতা করায় তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ডের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশে তাদের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।